মো. জাহিদুল হক, চবি প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) 'চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ' (CCRSBD) এর উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৬ বছর পূর্তি শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিরিখে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা এগারোটার দিকে প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর এর সভাপতিত্ব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পার্থ প্রতীম মহাজনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনায় চবি উপাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে পার্বত্য অঞ্চলে বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কঠোর পরিশ্রম ও বিচক্ষণতা দিয়ে এখানে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানে ঘুরতে যায় বউ বাচ্চা নিয়ে পাহাড়ে রাত কাটাতে চায়। অথচ এমন একটি সময় ছিল যখন নির্বিঘ্নে পার্বত্য অঞ্চলে চলাচল করতে পারতাম না। খুব খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা সে সময়গুলো অতিবাহিত করেছি। সামরিক বাহিনীর কেউ ঐ এলাকাগুলোতে ট্রান্সফার হলে তারা তাদের পরিবার থেকে শেষ বিদায় দিয়েই ঘর থেকে বের হতো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের চাহিদা অনুযায়ী আমরা তাদের জন্য কোটা চালু করেছি। এখানে উপজাতি অ-উপজাতি কোটাও রয়েছে। এছাড়াও তাদের জন্য দুটি হল নির্মাণ করা হয়েছ। এখন আমাদের কর্তব্য হবে যেখানে যারা পিছিয়ে আছে তাদের নিয়ে কাজ করা হোক সে পাহাড়ি বা সমতলের বাসিন্দা এর মধ্যে বৈষম্য রাখা যাবে না। এখন পার্বত্য এলাকাগুলোতেও বিদ্যুৎ আছে ঘরে ঘরে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সিতেও পিছিয়ে নেই আমাদের ছেলেরা। সকলে যাতে এগিয়ে যেতে পারি সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন আমাদেরও করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ যখন বিধ্বস্ত তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর যে কাজটি করেছিলেন সেটি হলো 'পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড' গঠন। এটি ছিল তার একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। এরপরে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এ চুক্তিটি সম্পাদনা করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার শৈশব এবং বেড়ে ওঠা তাই আমি খুব কাছে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের দেখতে পেয়েছি। ১৯৭৯ সালের আগ পর্যন্ত পাহাড়ি বাঙালীদের মধ্যে কোন ধরনের সংঘাত সহিংসতা ছিলনা। অসম্ভব সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যারা নদী ভাঙ্গন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ছিল তাদের তিনি পাহাড় স্থানান্তর শুরু করেন, এটি ছিল অপরিকল্পিত ও আলোচনা বহির্ভূত একটি কাজ। এছাড়াও তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। এই অস্ত্র দিয়ে পাহাড়িদের জিম্মি করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হতো। আর এর ফলশ্রুতিতে পাহাড়ীরা অস্ত্র সংঘাতের মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে সরকার গঠনের পর পাহাড়িদের সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে এক মহা বিপদের হাত থেকে বাঁচান। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাহাড়িরা স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের যোগ্য প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠাবে এবং তাদের দুঃখ দুর্দশা ও সমস্যা লাঘবের ব্যাপারে আলোচনা করবে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসবে।
আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন চবি আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক, চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ এবং চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ।
সময় জার্নাল/এলআর