নিজস্ব প্রতিবেদক:
অবৈধভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করছে সরকার- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘কাউকে অন্যায়ভাবে কিংবা বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গত ২৮ নভেম্বর বিএনপির সমাবেশে উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ক্যামেরা উড়ানো হয়েছিল। সমাবেশে কখন কতজন লোক উপস্থিত ছিল, ড্রোনের সাহায্যে আমরা মাথাগুনে সেটা বের করেছি। সেখানে কারা কাকে পিটিয়েছে, তারা কোথা থেকে এসেছে, সবকিছু আমাদের ক্যামেরায় রয়ে গেছে। ক্যামেরা থেকে খুঁজে কারা কারা জড়িত ছিল তা বের করা হয়েছে। যে যেখানেই থাকুক... সে যদি সাতক্ষীরা থেকে এসে থাকে আমরা সাতক্ষীরায় তাদের চেহারা (ছবি) পাঠিয়ে দিয়েছি। তাকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
আজ রোববার দুপুরের পর সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির ওই সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছিল, মাথা গুনে আমরা দেখেছি। আরও ছোট ছোট দল সেদিন সমাবেশ করেছিল। ড্রোনের মাধ্যমে ক্যাপচার করা সবার চেহারা আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।’
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সহিংসতা করে তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলেন। তারা আবার নানা ধরনের কথা বলেন। তাদেরকে রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না- এ সমস্ত কথা বলেন। এগুলো শুনলে আমাদের মনে হয়, আমরা কোন যুগে বসবাস করছি।’
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের আমলে ব্যাপক খুন-গুম ছিল দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন খুন-গুম আমরা সচরাচর দেখছি না। এগুলো আমরা ব্যাপক হারে দেখেছিলাম ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাসের উত্থান দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার দৃশ্যটা আপনারা দেখেছেন, খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা করেছিল। এসবগুলো কিন্তু সেই আমলেই হয়েছে। এগুলো একটা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। এখন যারা স্বপ্নে দেখছেন বিভ্রান্তি ছড়াবে, তারা একটা দুঃস্বপ্ন দেখছেন।’
আজ বিএনপির মানববন্ধনে বক্তারা জানিয়েছেন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে খুন ও গুমের দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু খোঁজখবর রাখেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এখানে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চরমপন্থি, বনদস্যু, জলদস্যু ক্রমান্বয়ে সারেন্ডার করেছে। এগুলো বিদায় নিয়েছে। খুন-গুমের কথা যদি বলতে হয়, ২০০৪-এ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি ছিল, সেখানে ৪৭০ জনের কাছাকাছি গুম হয়েছিল এক বছরে। এখন এসে যদি বলে এতগুলো খুন, এতগুলো গুম হয়েছে। সেগুলো তো বলতেই পারে। আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, খুন-গুমের শুরুই করেছিলেন তারা (বিএনপি)। আমরা এগুলো বন্ধ করে আজকে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।’
বিএনপির মানববন্ধনে বাধা দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পুলিশ অন্য জায়গায় গিয়ে মানববন্ধন করার অনুরোধ জানিয়েছিল। যানজট সৃষ্টি হতে পারে, সেজন্যই তারা অন্য জায়গায় করতে বলেছিল। সেই জায়গায় তারা যায়নি। করতে দেয়নি ঘটনা সত্যি নয়।’
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে বিএনপির-জামায়াত কিংবা অন্য দল, যত ধরনের প্রোগ্রাম করতে চেয়েছে, আমরা কোনোটাতেই বাধা দেইনি। তারা মানববন্ধন, মিছিল, লংমার্চ, অবরোধ, ধর্মঘট করেছে। আমরা কোনোটিতেই বাধা দেইনি। গত ২৮ অক্টোবরও আমরা বাধা দেইনি।’
হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের যদি আপত্তি থাকে, যে দলই হোক, তবে তারা করতে পারবে না। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যদি মনে করে এখানে হলে পরিবেশ নষ্ট হবে, সেখানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীরও দেখার বিষয় রয়েছে।’
এমআই