ডা. মারুফ রায়হান খান :
১. নিজেকে কখনও একেবারে এভেইলেবল করে দেবেন না। এভেইলেবল করে দিলেই মানুষ আপনাকে সস্তা ভাববে। আপনাকে সস্তা করার অধিকার আপনার নেই।
২. মানুষের জন্যে ফ্রি কিছু করতে কয়েকবার ভেবে নেবেন। বেশিরভাগ মানুষ নিঃস্বার্থ বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করতে পারে না। If you are good at something, never do it for free.
৩. মানুষকে ভালোবাসবেন। সবসময় মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবেন। মানুষ ঠিকঠাক জাস্টিস করতে পারে না তবে আল্লাহ তো পারেন। তিনি কখনও না কখনও আপনাকে তা বহুগুণে ফিরিয়ে দেবেনই। Man gets and forgets. Allah gives and forgives.
৪. ভালোবাসার মানুষকে অনেক ভালোবাসবেন ঠিক আছে। তবে নিজের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে না। নিজের সবটুকু দিয়ে দিলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখন আপনি কী নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন? শক্তি কোথায় পাবেন? সব না দিয়ে নিজের জন্যে কিছু ভালোবাসা রেখে দিয়েন। মানুষ খুব দ্রুতই আকর্ষণ হারায়।
সৈয়দ হকের এই লাইন দুটো মনে রাখবেন--
"মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয়, সোনার মোহর।"
৫. মা-বাবার হক্ব কথাগুলো আপনার জীবনের সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি। উনাদের কখনও কষ্ট দেবেন না।
৬. হারাম পথে কখনও উপার্জন কোরেন না। রিজিকের মালিক আল্লাহ। যে আল্লাহ একটা পাখিকেও অভুক্ত রাখেন না, তিনি আপনাকেও অভুক্ত রাখবেন না। এই ২২/২৩ বছর যিনি আপনাকে না খাইয়ে রাখেননি, আগামী জীবনেও না খাইয়ে রাখবেন না৷ হয়তো প্রতি বেলা ফ্রাইড রাইস খেতে পারবেন না, অন্তত ভাত খেতে তো পারবেন। হারাম টাকায় ফ্রাইড রাইস খাবার চেয়ে হালাল টাকায় ভাত খাওয়া অনেক প্রশান্তির। মনে রাখবেন যে আল্লাহ অঢেল দেবেন সে আল্লাহর কেড়ে নিতেও সময় লাগবে না।
৭. কখনও ফেইম, পপুলারিটি এসবের পেছনে ছুটবেন না। এগুলো মানুষকে শান্তি দিতে পারে না। ফ্যামিলি গাই হবেন। বেশি ফেমাস হলে আপনার লাইফ আর আপনার থাকবে না। সেটা পাবলিক প্রোপার্টি হয়ে যাবে। পপুলার লোকদের মানুষ তেমন ভালোবাসে না। বরং ঈর্ষা করে। লাইফের ফ্যালাসি হচ্ছে একসময় মানুষ চায় সবাই তাকে চিনুক জানুক। চেনা-জানা হয়ে গেলে সেই মানুষটাকেই মুখ ঢেকে বের হতে হয়। তার সামনে অনেক লোক ভিড় করুক সেটা আর পছন্দ করে না। সেলেব্রিটিদের মধ্যে ডিপ্রেশানের হার অনেক বেশি। তবে ভালো কাজ করতে করতে আল্লাহ যদি পরিচিত বানিয়ে দেন সেটা ভিন্ন কথা।
৮. পৃথিবীতে দুই ধরনের পেইন আছে। পেইন অফ ডিসিপ্লিন আর পেইন অফ রিগ্রেট। মানুষ হিসেবে জন্মেছেন মানেই আপনাকে যেকোনো একটা পেইন নিতেই হবে। পেইন অফ ডিসিপ্লিন নিলে আপনাকে রিগ্রেট নিতে হবে না। আর পেইন অফ রিগ্রেট নিতে চাইলে ডিসিপ্লিন না নিলেও হবে। ডিসিপ্লিন নিলে পেইন পেলেও সফলতা পাবেন৷ রিগ্রেট নিতে চাইলে পেইন তো পাবেন সেই সাথে তুমুল ব্যর্থতা।
৯. যে যোদ্ধা প্রস্তুতির সময় যতো বেশি পরিশ্রম করে ঘাম ঝরায়, যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ত ঝরার সম্ভাবনা ততো কমে যায়। আর যে প্রস্তুতির সময় ঘাম ঝরায় না, তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ত ঝরাতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা ঘাম ঝরাব না কি রক্ত।
১০. যদি ছেলে-মেয়ে, ধনী-গরীব, কালো-ফর্সা, লম্বা-খাটো, মোটা-চিকন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ কাউকে আলাদা দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে শিক্ষকতা পেশা আপনার জন্যে না। সবাইকে এক চোখে দেখবেন এই প্রমিজ নিজের কাছে করেই শিক্ষকতা করতে আসবেন। আপনার ছাত্রদের সময় অত্যন্ত মূল্যবান। আপনার ক্লাসের প্রতিটি মিনিট যেন গুরুত্বপূর্ণ হয় সে চেষ্টা করতে হবে। তার সময় যেন আপনি কোনোভাবেই নষ্ট না করেন খেয়াল রাখবেন। আপনার ক্লাস যেন কোনোভাবেই কাউকে বোর না করে সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনার স্টুডেন্টকে আপনি সম্মান করবেন। সে কিন্তু তার পরিবারে তার সোসাইটিতে অনেক সম্মানিত মানুষ। তাকে অসম্মান করার অধিকার আপনার নেই।
১১. আল্লাহ ভাঙা জিনিসগুলোকে অদ্ভুত সুন্দরভাবে ব্যবহার করেন। মেঘ ভেঙে বৃষ্টি ঝরান। মাটিকে ভেঙে বের করে আনেন ফসল। ফসল ভেঙে বীজ। আর সে বীজ ভেঙে হয় চারা। সেই চারা থেকে একদিন মহীরুহ।
যদি নিজেকে কখনও ছিন্নভিন্ন মনে হয় তবে জেনে রাখুন আল্লাহ আপনাকে খুব ভালো কিছুতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছেন।
যদিও এ কথাগুলো আমি আমার প্রাণের ছাত্রছাত্রীদের বলতাম, কিন্তু মূলত এর মাধ্যমে নিজেই নিজেকে বারবার রিমাইন্ডার দিতাম। আমার ছোট্ট জীবনের উপলব্ধি এগুলো।