মো. নিজাম উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নে মো. হুমায়ূন
নামে এক ওয়ার্ড যুবদল নেতাকে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। এ নিয়ে ইউনিয়নে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অর্থনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে তাকে স্বেচ্ছাসেবকলীগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০১২ সালের জুন মাসে চররমনী মোহন ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবদলের গঠিত কমিটিতে তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় বলে জানা গেছে।
তবে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব ইমতিয়াজ দাবি করেন, হুমায়ূন আগে যুবদল করলেও গত কয়েক বছর থেকে যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের
রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। তাই তাকে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটিতে আনা
হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে কমিটি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
আর সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. দুলাল হোসেন মোল্লা
বলেন, যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। হুমায়ূন দীর্ঘদিন থেকে যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। দলীয় মিছিল-মিটিং এ অংশ নিয়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে সে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ছিলো। যুবদলের রাজনীতির সাথে সে সম্পৃক্ত ছিলো না।
তবে ইউনিয়ন যুবলীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, হুমায়ূন কখনো যুবলীগ করেনি। সে যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। হঠাৎ সে এখন স্বেচ্ছাসেবলীগ নেতা হয়েছেন।
চররমনী মোহন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালও নিশ্চিত করেছেন, হুমায়ূন যুবদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছে। সে আওয়ামীলীগ করলেও এখন অনুপ্রবেশকারী। তাই তাকে পদে আনা ঠিক হয়নি।
চররমনী মোহন ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আবদুর রহিম নিশ্চিত করে বলেন, হুমায়ূন তাদের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, গত ১৯ মে চররমনী মোহন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা কমিটির সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইমতিয়াজ এবং সদর থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের পরদিন ২০ মে ওই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের তিন মাস মেয়াদী ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে ওই কমিটিতে ‘বিতর্কিত’ হুমায়ূনের নাম ছিলো না।
পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মো. হুমায়ূনকে ১ম যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০ মে এবং ২৮ মে গঠিত কমিটিতে স্বাক্ষর করেন সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মো. দুলাল হোসেন মোল্লা ও আরেক যুগ্ম আহবায়ক হাসেম আহমেদ রুপম। কিন্তু এতে সদর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সুমন কারীর কোন স্বাক্ষর ছিলো না।
ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক মো. ইলিয়াস মীর বলেন, পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে আমাকে আহবায়ক করে এবং ফরহাদ হোসেনকে ১ম যুগ্ম আহবায়ক করে একটি কমিটি দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে হুমায়ূনকে যুগ্ম আহবায়ক করার কথা ছিলো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যুবদল করার অভিযোগ থাকায় তাকে দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে জানতে পারি হুমায়ূনকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হুমায়ূনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি ২০১০ সাল থেকে যুবলীগের রাজনীতি করি। বিভিন্ন সময় নৌকার এজেন্ট ছিলাম। তবে ১১ বছরে তিনি কোন পদ পদবীতে ছিলেন না বলে জানান।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন বেলাল শনিবার দুপুরে বলেন, ইউনিয়ন সম্মেলনের দিন হুমাযূনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠায় তাকে কমিটিতে অন্তভূক্ত করা হয়নি। পরবর্তীতের সে যুবদলের সাথে সম্পৃক্ত নয় মর্মে থানায় জিডি করেছে। এর ভিত্তিতে তাকে আবার কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তারপরেও শুক্রবার রাতে মৌখিকভাবে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা হবে।
সময় জার্নাল/এমআই