সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে ক্যাম্পাসে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন তারা। টানা সাড়ে সাত ঘন্টা তদন্ত শেষে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর আগে গতকাল রবিবার বিকেলে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তারা।
জানা যায়, তারা সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, রেজিস্ট্রার, প্রকল্প পরিচালক, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), প্রধান প্রকৌশলী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের থেকে পৃথকভাবে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। পরে ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও অফিসের প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই-বাছাই ও পরিদর্শন করেন। এসময় ইউজিসির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের।
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চাকরির প্রশ্ন ফাঁস, নিয়োগ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দুর্নীতি সংক্রান্ত উপাচার্যের অন্তত ১৪টি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়ার পরপরই অডিও গুলো দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে শুরু হয় নানা আলোচনা সমালোচনা। এবং এ নিয়ে তখন তিন দফায় উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। এছাড়া প্রচারিত অডিওসমূহতে উপাচার্যের কথোপকথনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অডিওতে কন্ঠটি উপাচার্যের নিজের কিনা সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানসহ তার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য পৃথক বিবৃতি দিয়েছিলো শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। পাশাপাশি তারা এ বিষয়ের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রচারিত অডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ লিপিবদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে লিখিতভাবে চিঠি প্রেরণ করে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত পহেলা নভেম্বর ইবি উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন ইউজিসি এর সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের। এছাড়া সদস্য সচিব হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্টের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান এবং সদস্য হিসেবে রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান। কমিটিকে যথাশীঘ্র সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো নথি-পত্র পরীক্ষা করা এবং সংশ্লিষ্ট যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইবির শিক্ষক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও শাপলা ফোরামের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্যের অডিও ফাঁসসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করছে ইউজিসি। এর আগে শিক্ষক সমিতি ও শাপলাফোরাম থেকে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছিল। আমাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাদের কাছে কিছু ডকুমেন্ট ছিল। আমাদের থেকেও কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে।’
তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. আবু তাহের জানান, ‘আমরা অভিযোগের তদন্তে এসেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি। আরও কিছু তথ্য তারা পরে দিতে সম্মত হয়েছে। তদন্ত শেষে আমরা রিপোর্ট দাখিল করতে পারব। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
এমআই