স্পোর্টস ডেস্ক:
অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সাতজনকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলতে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আনকোরা সেই সাতজনের একজন ছিলেন শামার জোসেফ। দেড় বছর আগেও যিনি ছিলেন নৈশ প্রহরী। সেই শামার তার ডানহাতি পেস বোলিংয়ে ব্রিসবেনের গ্যাবায় লিখলেন ইতিহাস। পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাঠে ২৬ বছর পর টেস্টে হারিয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
রোববার ব্রিসবেনে উত্তেজনায় ভরপুর টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ করেছে ১-১ ড্র। ক্রমাগত বাজে পারফরম্যান্সে ডুবতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের জন্য নিশ্চিতভাবেই এসেছে স্মরণীয় দিন।
অস্ট্রেলিয়াকে এর আগে তাদের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারাতে পেরেছিল সেই ১৯৯৭ সালে। ২৬ বছর পর এমন আনন্দের দিন পেল ক্যারিবিয়ানরা। দলকে অকল্পনীয় দিন এনে দেওয়ার নায়ক শামার। ৬৮ রানে ৭ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
২১৬ রানের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থামে ২০৭ রানে। স্বাগতিকদের ইনিংস একা টেনে নিচ্ছিলেন ওপেন করতে নামা স্টিভেন স্মিথ। তিনি ৯১ রানে অপরাজিত থেকে দেখেন দলের হার। তাকে নন স্ট্রাকিং প্রান্তে রেখে জশ হ্যাজেলউডকে বোল্ড করে পাগলাটে দৌড়ে দুনিয়া মাত করেন শামার।
অ্যাডিলেডে অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে আগমনী বার্তা আগেই দিয়েছিলেন ২৪ পেরুনো পেসার। ১৩ উইকেট নিয়ে অজিদের ডেরায় সিরিজ সেরাও হলেন তিনি।
অথচ দিনের শুরুতে এমন কিছুর আভাসই ছিলো না। আগের দিনের ২ উইকেটে ৬০ রান নিয়ে দিন শুরু করে স্মিথ- ক্যামেরন গ্রিনের ব্যাটে নিরাপদে জয়ের দিকে ছুটছিল অস্ট্রেলিয়া।
৩১তম ওভারে কি সব হিসেব নিকেশ বদলে দিতে থাকেন শামার। দলের ১১৩ রানে ৪২ করা গ্রিনকে আউট করে ৭১ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। পরের বলেই বোল্ড করে দেন ট্রেভিস হেডকে। মিচেল মার্শও কিছুক্ষণ টিকে থাকার পর শিকার হন শামারের। খানিক পর অ্যালেক্স কেয়ারিকেও তুলে নেন এই পেসার। ২৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় অজিদের ইনিংস।
এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপদে স্মিথের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েন মিচেল স্টার্ক। দ্রুত রান উঠিয়ে চাপ হালকা করছিলেন তারা। ৩০ বলে জুটিতে ৩৫ আসার পর স্টার্ককে ফিরিয়ে ফের আঘাত হানেন শামার। এরপর অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকেও কিপারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে অবিশ্বাস্য রোমাঞ্চের জন্ম দেন তিনি।
গোলাপী বলের এই টেস্টে নৈশভোজের বিরতির সময় শেষ ২ উইকেট নিয়ে আর ২৯ রান করতে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বিরতির পর ফিরেই ন্যাথান লায়নকে কিপারের হাতে ক্যাচ বানান আলজেরি জোসেফ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের মাঝে স্রেফ দাঁড়িয়ে তখন স্মিথ। তিনিই বের করে নিচ্ছিলেন ম্যাচ। আলজারিকে স্কুপে ছক্কার পর একাধিক প্রান্ত বদলে লক্ষ্য এক অঙ্কে নামিয়ে আনেন তিনি। তবে শামারের ওভারে দুই বল বাকি থাকতে হ্যাজেলউডকে স্ট্রাইক দিয়ে হয়ত ভুলটা হয়ে যায় তার। শামারের ১৫০ ছুঁইছুঁই গতি, মুভমেন্ট একদম বুঝতে পারেননি অজি এগারো নম্বর ব্যাটার।
এই টেস্টের শুরু থেকেই বারবার রঙ বদল দেখা গেছে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর নিচের দিকের ব্যাটারদের প্রতিরোধে ঘুরে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়ানরা। কেবাম হজ, জশুয়া দা সিলভা, কেভিন সিনক্লিয়ারদের ফিফটিতে ৩১১ রান করে তারা।
এরপর ৫৪ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেট তুলে দারুণ নিয়ন্ত্রণ নেয় টেস্টের। খাদের কিনার থেকে উসমান খাওয়াজা- অ্যালেক্স কেয়ারির ব্যাটে ২৮৯ পর্যন্ত করতে পারে অজিরা।
২২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ১৯৩ রান যোগ করে। ২১৬ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই উসমান খাওয়াজাকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় দিনের বিকেলে মারনাশ লাবুশানেকেও ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলার আভাস দেয় তারা।
চতুর্থ দিনে নেমে স্মিথ-গ্রিন কাজটা সহজ করতে থাকলেও শামারের স্পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন গল্প লিখে জয়ের আনন্দে ভাসে ক্যারিবিয়ানরা।
এমআই