আলী আজীস, মোংলা প্রতিনিধি:
মোংলায় চাদাঁ না দেয়ায় এক ব্যাবসায়ীকে মেরে জখম করেছে একদল সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার বিকালে উপজেলার সোনাইলতলা চাপড়ার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মেরে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখলে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। থানায় মামলা না করার জন্য মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেণ ভুক্তভোগী। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার সকালে মোংলা থানায় এজাহার দাখিল করেন ভুক্তভোগী।
থানায় দেয়া এজাহার সুত্রে ও ভুক্তভোগী মাহবুব চৌধুরী জানায়, ৮-১০ বছর সরকারি রাজস্বের মাধ্যমে বৈধভাবে দুবলার চরে মাছের ব্যবসা করে আসছে সে। আর যারা তাকে মেরে আহত করেছে তারা সকলেই ওই একই এলাকার প্রতিবেশী এবং তারা সুন্দরবনে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে কাকড়া ধরা, হরিণ শিকার ও বন্যপ্রানী নিধন সহ বনের গহীনে বহু অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে জড়িত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই তার ব্যবসার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিনিয়ত চাদাঁ দাবী করে আসছিল লিটন গাজী সহ এসকল সন্ত্রাসীরা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ব্যাবসায়ীক ভাবেও ক্ষতি করে আসছিলো এ সকল লোকজন।
এরই মধ্যে প্রথমে গত ৭ জানুয়ারী সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে দলবদ্ধ হয়ে উলুবুনিয়া গ্রামে তার নিজ বাড়ির সামনে গিয়ে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে লিটন গাজী সহ কয়েকজন লোক। এসময় প্রকাশ্যে বলে, চাঁদার টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না এবং তাকে মেরেফেলা সহ এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যাবসায়ী মাহবুবের। পরে ঘর থেকে বের না হলেও দুই দিনের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা দেয়ার সময় বেধে হুমকি দিয়ে আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরের দিন ৮ জানুয়ারী পেড়িখালী খেয়াঘাটে ভুক্তভোগী রাখা মাছের ট্রলারটি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আটকে রাখে এ সকল সন্ত্রাসীরা। পরে সহকারী পুলিশ সুপার (মোংলা-রামপাল সার্কেল) ও রামপাল থানার সহায়তায় তাদের হাত থেকে ট্রলারটি উদ্ধারের পর এ ঘটনা নিয়ে মোংলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এবং ৯ জানুয়ারী ব্যবসার উদ্দেশ্যে ট্রলার নিয়ে দুবলার চরে চলে যায় আহত মাহবুব। এতে সন্ত্রাসীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়। সর্ব শেষ ১ ফেব্রুয়ারী দুবলার চর থেকে মাছ নিয়ে মোংলায় আসে ভুক্তভোগী মাহবুব। ২ ফেব্রুয়ারী মাছ বিক্রি করে টাকা নিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি যাওয়ার পথে পূর্ব থেকে রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা লিটন গাজী সহ তার সন্ত্রাসীরা মাহবুবকে ধাওয়া করে। পরে জীবন রক্ষার্থে চাপড়ার মোড়ে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানে ফেলে তাকে এলোপাথারী ভাবে বেদকর মারপিট করে। এক পর্যায়ে লিটন গাজী তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা চেপে শ্বাস রোধ চেষ্টা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে মেরে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখে এবং মাহবুবের কাছে থাকা মাছ বিক্রিত প্রায় একলক্ষ ৬ হাজার ৩শত টাকা নিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। ওই সময় এলাকার কয়েক পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
এরা যে সন্ত্রাসী এবং সুন্দরবনের অপরাধ মুলক কার্যকলাপে জড়িত তার প্রমান হলো সন্ত্রাসী বাবর গাজী পিতা জাহাঙ্গীর গাজী সুন্দরবনে ডাকাতি করার সময় র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছিলো। এছাড়া ইতো পুর্বে সুন্দরবনে অবৈধ চাড়ো দিয়ে কাকড়া ধরা, বিষ দিয়ে মাছ শিকার, হরিণ শিকার সহ বেশ কিছু অপরাধে কোস্টগার্ড, বন বিভাগ ও পুলিশের হাতে আটক হয়েছিল লিটন গাজী সহ অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা। যার মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগী মাহবুব চৌধুরী বাদি হয়ে মৃত এজাহার গাজীর ছেলে ইসমাইল গাজী ওরফে লিটন গাজী, আমজেদ গাজীর ছেলে জোবায়ের গাজী ও মৃত জাহাঙ্গীর গাজীর ছেলে বাবর গাজীকে চিহ্ণিত করে অজ্ঞাত নামা আরো ৬/৭ জনকে আসামী করে মোংলা থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম আজিুল ইসলাম বলেন, সোনাইলতলার চাপরাড় মোড় এলাকায় মারামারীর ঘটনা নিয়ে একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এ নিয়ে তদন্ত চলছে, সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
সময় জার্নাল/এলআর