বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা
হল প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ভোগান্তিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রায় আটশরও বেশি শিক্ষার্থী। কোন পূর্বনোটিশ ছাড়া অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ক্যান্টিনের ম্যানেজার পরিবর্তন হয়ে যাওয়া হলটিতে নিয়মিত ঘটনা। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আঙ্গুল তুলছেন হলটির প্রভোস্টের দিকে।
আবাসিক হলটির ডাইনিং-ক্যান্টিন ঘিরে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির ঘটনা দিয়ে শুরু হয়ে ক্যান্টিন ম্যানেজারের গলায় রামদা ঠেকানোর অভিযোগেসহ স্বয়ং ক্যান্টিন ম্যানেজারকে বিদায় করে দেয়ার পর এবার হলটির ক্যান্টিন ভাড়া দেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অনুসন্ধানে সাবেক ক্যান্টিন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে একই ক্যান্টিনকে দুই ব্যাক্তির কাছে ভাড়া দেয়া এবং বিনা নোটিশে ক্যান্টিন-ডাইনিং ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হলটির প্রভোস্টের বিরুদ্ধে।
গত ১৬নভেম্বর সাবেক ক্যান্টিন ম্যানেজারে জাহিদের গলায় রামদা ধরে ছাত্রলীগ নেতা সজীব এবং আরিফের হত্যার হুমকি পর বিনা নোটিশে জাহিদকে ছাড়তে বলা হয় ক্যান্টিনের দায়িত্ব। এ ঘটনার পর আড়ায়মাসে পর পর তিন জনকে ক্যান্টিন পরিচালনার দ্বায়ীত্ব দেওয়া হলেও স্থায়ী হতে পারেননি কোন ম্যানেজার। ক্যান্টিন ম্যানেজার ইমন ১ মাস ৪ দিন, শাহাদত ৬ দিন এবং বাদল ২৫ দিন ক্যান্টিন চালান। বাদলের পর আবার কাজল চালানো চেষ্টা করলেও এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারেননি। ফলাফল স্বরূপ পনেরো দিন থেকে বন্ধ রয়েছে ক্যান্টিন।
সর্বশেষ ১৩ মার্চ কাজল ক্যান্টিন ছাড়ার পর গত ১৫ দিন ধরে ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হলটির শিক্ষার্থীরা। রোজায় সেহরি করতে অন্য হল কিংবা বাইরের দোকানগুলায় উচ্চমূল্যের এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাবার খেতে ছুটতে হচ্ছে হলটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে। এমন দুরাবস্থার জন্য শিক্ষার্থী এবং ক্যান্টিন সংশ্লিষ্টরা দুষছেন হলটির প্রভোস্ট ড. কামাল উদ্দিনকে। জামানত না নিয়ে প্রত্যেককে ক্যান্টিনের দায়িত্ব দেওয়ায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তবে হল কর্তৃপক্ষের অভিমত, নিয়ম না থাকলেও 'জরুরী' প্রয়োজনেই বিজ্ঞপ্তি এবং জামানত ছাড়া এসব ব্যাক্তির কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গত ৩ মাস ধরে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ক্যান্টিনটির ১২ কর্মচারী। তিন মাস থেকে নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় ঈদের সময় বাড়িতে টাকা পাঠানো নিয়ে শঙ্কা এবং অর্থসংকটে নানাবিধ দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানিয়েছেন ক্যান্টিনটির কর্মচারীরা। তারা বলছেন, প্রভোস্টের নিকট এ বিষয়ে সহযোগীতা চাইলে তিনি তাদের আশ্বাস দিয়ে ফিরিয়ে দেন। ক্যান্টিন ম্যানেজারদের এমন নাটকীয় আসা-যাওয়ায় তাদের কাছে বিভিন্ন অংকে কর্মচারীদের ৫০ হাজার টাকার অধিক বেতন বাকি রয়েছে। তবে বেতন বাকী থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন হল প্রভোস্ট।
এদিকে বারবার ম্যানেজার বিদায়ে আড়াই মাস পর যেন সম্বিৎ ফিরে পায় হল প্রশাসন। আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করলেও গত ১৮ মার্চ শেকৃবিতে ফেরতযোগ্য দেড় লাখ টাকা জামানত সহ ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ক্যান্টিন ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে সাবেক ক্যান্টিন ম্যানেজার জাহিদের থেকে দেড় লাখ টাকা পাবে হল প্রশাসন আর এই টাকা তুলতেই জামানতের পরিমান বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন। এ ব্যাপারে ড. কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, হল কর্তৃপক্ষ চাইলে জামানত ইচ্ছেমত বাড়াতে পারে। জাহিদ শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা পেতো। সেটি আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দিতে নিষেধ করেছি। দেখি, নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লিস্ট ধরে টাকাগুলো হল কর্তৃপক্ষ নিজে আদায় করতে পারে কিনা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলক কুমার পাল বলেন, ক্যান্টিনের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি। জানতে পেরেছি শীঘ্রই লোক ঠিক হবে। ডাইনিং খোলা আছে, শিক্ষার্থী সেখানে খেতে পারছে। আর জামানত হল কর্তৃপক্ষ চাইলে বাড়াতে পারেন। তবে হুট করে এত পরিমাণ জামানত বাড়ায় হয়ত অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করবে না। আমি আবার হলে যাবো, কথা বলবো।
আরইউ