জেলা প্রতিনিধিঃ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ও কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের নয়টি গ্রামে নতুন করে ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে বুধবার (০২ জুন) থেকে কার্পাসডাঙ্গা ও নাটুদাহ ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে নজির আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৫ জুন) রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নজির আলী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের মৃত. নিশিন্দী মহলদারের ছেলে। তবে এই দিন সকালে তারই বড় ভাই জমির হালদার (৮০) করোনার উপসর্গ নিয়ে নিজ বাড়িতেই মারা যায়। একই দিনে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়া শনিবার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন ও জাহাজপোতা গ্রামের নুরুল ইসলাম নামে দুইজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। পরে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
অপর দিকে আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় শনিবার (৫ জুন) দুপুরে দামুড়হুদার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুদীপ্ত কুমার সিংহের সভাপতিত্বে টানা তিন ঘণ্টা উপজেলা করোনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আজগার টগর সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন ৯টি গ্রামকে লকডাউনের আওতায় আনার পরামর্শ দেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন থেকে লকডাউন ঘোষণাসহ তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
নতুন করে লকডাউনের আওতায় যে ৯টি গ্রাম আনা হয়েছে- দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ঝাঝাডাঙ্গা, নাস্তিপুর, কামারপাড়া, বাড়াদি, ছোট বলদিয়া, বড় বলদিয়া এবং কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, চাকুলিয়া ও ঠাকুরপুর।
এর আগে বুধবার (২ জুন) করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় দামুড়হুদা সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ও নাটুদাহ ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি গ্রাম লকডাউন ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত উপজেলায় মোট ১৬টি গ্রাম লকডাউন করা হলো।
এদিকে শনিবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আগের পাঠানো ১১ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। ১১ জনের মধ্যে চারজনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। এ চারজনের বাড়ি জীবননগর উপজেলায়। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত রোগী শনাক্ত সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৬২ জন। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮২৩ জন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৪৬ জন করোনা রোগীর মধ্যে হাসপাতালে ১১ জন, রেফার্ড একজন ও বাকি ৩৪ জন হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ১১ জনের মধ্যে একজন রেফার্ড, একজন হাসপাতালে ও ৯ জন বাড়িতে রয়েছেন। দামুড়হুদা উপজেলার ৯৩ জনের মধ্যে হাসপাতালে ১৩ জন, রেফার্ড দুইজনের মধ্যে শনিবার রাতে রাজশাহীতে মারা যায় একজন, বাড়িতে আছেন ৭৮ জন।
জীবননগর উপজেলার ১৯ জনের মধ্যে একজন হাসপাতালে, বাকি ১৮ জন নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৪ জন, চুয়াডাঙ্গার বাইরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন।
দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু বলেন, সীমান্তবর্তী এই এলাকায় হঠাৎ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেড়েছে। আমাদের এই এলাকায় অনেক চুলের কারখানা রয়েছে। এই কারখানাগুলো এক মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, অবৈধভাবে চুল ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চলাচলের মাধ্যমেই করোনা আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝুকিপূর্ণ গ্রামগুলো উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোরভাবে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা, কার্পাসডাঙ্গা ও নাটুদহ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ফলে লকডাউন করে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চলছে। এলাকা ক্যাম্প করে আক্রান্তদের নমুনাও সংগ্রহ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, শনিবার (৫ জুন) রাতে করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেলে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে পরশু রাজশাহীতে নেয় পরিবারের সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলায় ৯৭ জন আক্রান্ত রোগী আছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় ১৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
সময় জার্নাল/এমআই