বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক আবাসিক হলের ছাত্রলীগের সভাপতিকে হত্যার হুমকি এবং হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগেরই দুই নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার (১ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকির অভিযোগ তুলে ধরেন অভিযোগকারী ছাত্রলীগ নেতা।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মো. তাজবিউল হাসান অপূর্ব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং হলের ২০৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাজবিউল হাসান অপূর্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ হলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনহাজ ও শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মিঠু। তারা দুজনই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। এদের মধ্যে মিনহাজ সভাপতির খুব ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
অভিযোগকারী ছাত্রলীগ নেতা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তিনি খাঁটি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। দীর্ঘদিন ধরে হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। শেষ তিন-চার মাস কিছু কিছু কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছেন। দীর্ঘ সময় রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলেও নোংরা রাজনীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তার মাস্টার্সের দুইটা সাবজেক্টের পরীক্ষা হয়েছে, আরও তিনটা সাবজেক্টের পরীক্ষা এখনো বাকি। তিনি পারিবারিক কারণে ঢাকায় এসেছেন। পরীক্ষা শেষ হলে এমনিতেই হল ছাড়তেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই তার কক্ষ দখল।
হত্যার হুমকির বিষয়ে লিখেছেন, আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী পরীক্ষা দিতে আসলে তার লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষয়টা দুঃখজনক। আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। বর্তমানে শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি। তারপরও ছাত্রলীগ নেতাদের এমন আচরণ আশা করিনি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করবো আমি।
এ বিষয়ে তাজবিউল হাসান অপূর্ব বলেন, আমার মাস্টার্স শেষ হয় নি এখনো। কিন্তু মিনহাজ এবং মিঠু আমার কক্ষে গিয়ে আমার রুমমেটকে আজকেই হল ছাড়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। এটা জানার পর মিনহাজ ভাইকে বলি,আমি এখনো হলের সভাপতির দায়িত্বে আছি। তাছাড়া আমার মাস্টার্সও শেষ হয় নি। কিন্তু সে আমায় গালাগাল করতে করতে থাকে আর বলে তুই আজকেই হল থেকে বের হবি।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইকে বিষয়টি বলি। পরে মিনহাজ আমাকে বলে, সে এখন সব হলের দায়িত্বে, সে যা বলবো তাই হবে। আমাকে নেমে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে । আমি এখনো এই হলের সভাপতি। সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পরীক্ষা দিতে আসলে পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। আমার লাশও নাকি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
হলের আবাসিকতা আছে কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার পাঁচ বছরের হল ফি বাকি ছিল। মাস্টার্সের পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় পুরো টাকা পরিশোধ করে আমি সীট বাতিল করে দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মিনহাজুল ইসলাম বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমি আজকে শাহ মখদুম হলে যা-ই নি। আমি সারাদিন বঙ্গবন্ধু হলে ছিলাম। আমাকে একজন দাওয়াত দিয়েছিল, আমি সেখানে পড়াশোনা করতেছিলাম। তার সাথে আমার আজকে সাংগঠনিক বিষয়ে কথা হয়েছে যেটা পার্সোনাল। সে কেন আমার নামে অভিযোগ করলো জানি না। তার (অপূর্ব) বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।'
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘ছাত্রলীগের একজন নাকি অপূর্বকে থ্রেট করেছে। এখানে মিনহাজ জড়িত নয়। মিনহাজের সঙ্গে অপূর্বর কথা হলে শিষ্ঠাচার মেনে কথা বলা উচিত ছিল যেহেতু মিনহাজ বয়সে বড়। আমি একটু বাইরে আছি। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদেরকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিব।’
সময় জার্নাল/এলআর