সৌরভ শুভ, জাবি প্রতিনিধি:
নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে বলেই আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বেল সাড়ে ৩ টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জহির রায়হান মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (৫২ ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আঙ্গরপোতা দহগ্রামে দেখেছি স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন একজন নারী অথবা কোন জেলার ডিসি মহিলা অথবা তার পরের জন মহিলা। নারীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে পারছি বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বাংলাদেশকে বদলে দেব। আমরা এগিয়ে গিয়েছি ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারনে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সবজায়গা পৌঁছে দিয়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেব দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। ২০০৪-৬ এর তুলনায় আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে করে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যথেষ্ট বেড়েছে। এবার মানসম্মত শিক্ষার দিকে মনোযোগী হওয়ার পালা। তোমরা মেধা জ্ঞানে এগিয়ে গিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এজন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান।
শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আফসানা হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম নবীন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন ও স্বাগত জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন কর্তৃক শিক্ষা ও গবেষণার ওপর 'এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং ২০২৪' এ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেছে। এছাড়াও বিশ্ব সেরা ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযাগ্য সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্থান লাভ করেছে। বিভাগ ভিত্তিক র্যাংকিং এ দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শিক্ষা-গবেষণায় দেশ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে উপাচার্য বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছপালা, জলাশয়, মৎস্য এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ যে সম্পদ আছে, তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা ব্যক্তি আছেন। শিক্ষার্থীরা সেসবে নিজেকে সংযুক্ত করার অপসংস্কৃতিতে জড়াবে না বলে উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রবেশিকা বক্তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছো নিজ যোগ্যতায়। তবে এক্ষেত্রে তোমার বাবা মায়ের অবদান কম নয়। তুমি তাদের ভুলে যেও না। তোমার আনন্দ যদি অন্যকে আনন্দ দেয় তাহলে তুমি সফল। তোমার দুঃখ যদি অন্যকে স্পর্শ করে তাহলে তুমি সার্থক।
তিনি আরো বলেন, বিদেশী কর্মীরা আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর ২০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। জনবহুল এ দেশে তোমরা দক্ষ হয়ে উঠলে দেশের টাকা বাইরে যাবে না। এ সময় তিনি বাংলা ভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায় দক্ষতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে, নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের কাছে নিজ নিজ অনুষদের নবীন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম সম্পাদনের জন্য উপস্থাপন করেন। এ সময় অনুষদগুলোর ডিন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য গ্রহন করেন। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিব তালুকদার এবং অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিকা বুশরা। সবশেষে, নবীন শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ দান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার সহ প্রমুখ।
প্রবেশিকা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরুজ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইন্সটিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (৪৮ ব্যাচ) প্রবেশিকা অনুষ্ঠান হয়েছিলো। এরপর, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রবেশিকা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি।
এমআই