সাইফ ইব্রাহিম, ইবি প্রতিনিধি:
বিদ্যুৎ বিল চাওয়াকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংলগ্ন ছাত্রী মেসে স্থানীয়দের সাথে শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন স্থানীয় ও চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন নুর জাহান ছাত্রী মেসে এ মারামারির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাস সংলগ্ন ওই মেসে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফারিয়া খাতুন। তার গত কয়েক মাসের বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া হিসাব নিয়ে মেস ম্যানেজারের সাথে বাকবিতন্ডা হয়।
পরবর্তীতে সে তার বিভাগের ও একইবর্ষের ছেলেবন্ধু আবু হানিফ পিয়াসকে বিষয়টি জানালে পিয়াস তার হলের ১০-১২জন বন্ধুদের সাথে নিয়ে মেসে উপস্থিত হয়। এসময় পিয়াসের সাথে ম্যানেজারের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
এতে পিয়াসসহ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সমাজ কল্যাণ বিভাগের সাকিব আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির এবং আইসিটি বিভাগের নাঈম রেজা আহত হন বলে জানা গেছে।
মারামারি সময় মেসের ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস ও স্থানীয় আশিক হোসেন নামে এক ব্যক্তিও আহত হন বলে দাবি স্থানীয়দের। এছাড়া স্থানীয়রা পরবর্তীতে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীকেও মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। পরে শৈলকূপা থানাধীন রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় মাতব্বরকে সাথে নিয়ে দুপক্ষের মাঝে সমঝোতা করে দেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ফারিহা খাতুন জানান, গত জানুয়ারি মাসে আমি মেসে উঠি। ৪০৫ নাম্বার রুমে আমার উঠার কথা ছিলো, কিন্তু অন্যরুমে উঠানো হয়। আমি সে রুমে যেতে চাইলে বারবার ঘুরাতো মেনেজার। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে মেস ম্যানেজার আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করে। আমি আজ সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে তিনি আমাকে বাজে ইঙ্গিত দেন। টাকা নেওয়ার সময় ম্যানেজার আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন।
পরে আমি টাকাটা ছুড়ে দিলে তিনি আমার বাসার নাম্বার চান এবং বলেন, ‘বেয়াদব মেয়ে। তুমি আজকেই মেস ছেড়ে দিবা।’ পরে আমি আমার বিভাগের বন্ধু পিয়াসকে বিষয়টি জানালে সে মেস ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে আসলে ম্যানেজার ও নিরাপত্তাকর্মী তার সাথে বাজে আচরণ করে। পরে সে তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে আবারও ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার তার জামার কলার ধরে বের করে দেয়। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করবো।
ফারিয়ার বন্ধু আবু হানিফ পিয়াস বলেন, আমাদের বান্ধবীর সাথে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করে আসছিলো। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত প্রদান করে বলে আমাদের জানায়। এছাড়াও মেসের অন্যান্য মেয়েদের সাথেও প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করে। আজকেও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়। এতে আমরা চার বন্ধু আহত হই। পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
এ বিষয়ে আহত নাঈম রেজা বলেন, আমি রাতে খেতে বের হয়েছিলাম, তখন দেখি ওখানে আমার বন্ধুরা আছে। সেখানে গিয়ে দেখি তাদের সঙ্গে মেস ম্যানেজার বাজে আচরণ করছে। পরে ওখানে হাতাহাতি মতো হয়েছিলো। এতে কয়েকজন ইনজুরি হয়।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেস ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বলেন, গত জানুয়ারি মাসে ওই মেয়ে মেসে উঠে। মেসে ওঠার সময় জামানত হিসেবে সবার থেকে চার হাজার টাকা নেওয়া হলে ওই মেয়ে সমস্যার কথা বললে তাকে দুই হাজার টাকায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এরপর সে এতদিন থেকেছে কিন্তু কোন বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। তার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় এক হাজার টাকা। আমি কয়েকবার বিল চাইতে গেলে সে বিভিন্নরকম বাহানা দিতে থাকে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, আমি তার সঙ্গে কোন বাজে আচরণ করিনি। উল্টো সে আমার উপর জোরে জোরে কথা বলে এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় মাতব্বর রেজাউল করিম খান বলেন, মেসের মধ্যে কোন ঝামেলা হলে মেস ম্যানেজারকে জানাতে হতো। আর মেস মেনেজারের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে সেটা মেসের মালিককে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কিন্তু ওই মেয়েটা সেটা না করে তার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়েছে, যেটা ঠিক হয়নি। স্থানীয়দের উপর মারধর করা হলে তারা তো বসে থাকবে না। স্থানীয়দের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হোক আমরা চাইনা। যেসব শিক্ষার্থীরা আজকে ঝামেলা করেছে তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এস আই) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই আমরা এখানে এসেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। তবে কেউ আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
সময় জার্নাল/এলআর