মোঃ ইমরান মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:
পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরিক্ষায় পাশ করলেও অর্থের অভাবে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ও পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিয়ামকে নিয়ে সংবাদ
প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে নেয় সরিষাবাড়ি থানার ওসি । এরপর সেই অধ্যম সিয়ামের লেখাপড়ার দ্বায়িত্ব নিলেন সরিষাবাড়ি থানার ওসি মুশফিকুর রহমান।
রবিবার ৯ জুন সকালে সরিষাবাড়ি অনার্স কলেজে একাদশ শ্রেণীর বিএম শাখায় ভর্তি হয় সিয়াম। অভাব, দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে ইচ্ছা আর মনোবল নিয়েই এগোতে চায় সে।
সিয়াম চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পা দিয়ে লিখেই জিপিএ ৩.৮৩ পেয়েছে। কলেজে ভর্তি করানোর সুযোগ করে দেওয়ায় খুশি সিয়াম ও তার পরিবার।
জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়া ও জোসনা বেগমের ছেলে সিয়াম। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই।
কিন্তু থেমে নেই তার পড়ালেখা ও খেলাধুলা।তবে পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রাথমিকের মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়ালেখা। বিদ্যালয় থেকে বেতন মওকুফ করলে পুনরায় পড়ালেখা শুরু করে সিয়াম। ২০১৮ সালে ব্র্যাক শিশু নিকেতন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে একই ইউনিয়নের চাপারকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় সে। এর পর কৃতিত্বের সাথে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সিয়াম। সে এবার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে পরিক্ষায় পাশ করে অদম্য সিয়াম।
সিয়ামের সাথে কথা হলে সে জানায়, এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর পরর্বতীতে অর্থের অভাবে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির অনিশ্চয়তায় পড়ে সিয়াম ও তার পরিবার। থানার ওসি আমার পড়াশোনার দ্বায়িত্ব নেওয়ায় অনেক খুশি হয়েছি। ওসি স্যার সব সময় আমার খোঁজ নিচ্ছেও বলে জানান সিয়াম।
সিয়ামের সহপাঠীরা জানায়, সে ভর্তি হওয়ায় খুশি তারা। কলেজে পড়াশোনার সময় সব ক্ষেত্রে সহযোগিতায় আশ্বাস দেয় সহপাঠীরা।
সরিষাবাড়ি থানার ওসি মুশফিকুর রহমান বলেন, গণমাধ্যমে খবর প্রচার হলে সিয়ামের বাড়ীতে যান তিনি। তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে সিয়ামের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেই। আজ তাকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। পরর্বতীতে পড়াশোনার সকল ব্যয় বহন করবেন বলে জানান তিনি।
সরিষাবাড়ি অনার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ এইচ এম মিজানুর রহমান বলেন, থানার ওসি মুশফিকুর রহমান সিয়ামকে কলেজে নিয়ে আসেন ভর্তি করানোর জন্য। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রশিদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের পরামর্শে সিয়ামকে বিনা বেতনে কলেজে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
সময় জার্নাল/এলআর