সময় জার্নাল ডেস্ক:
অবশেষে এলো কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ কবিকুলের বন্দিত ঋতু বর্ষাকাল। আজই আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। ‘বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে’ দুয়ারে উপস্থিত সজল শ্যামল বর্ষা।
গত কয়েক দিনের আবহাওয়াই বলছিল, বর্ষা এবার আর পঞ্জিকার জন্য অপেক্ষা করেনি। বিশেষ করে সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ তা ভালো করেই টের পাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় প্রকৃতিমাতার মতিগতি বেশ উল্টেপাল্টে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ষড়ঋতুর বাংলা তিন ঋতুর দেশে পরিণত হলো বলে; সুদীর্ঘ গ্রীষ্ম, তুলনায় কিঞ্চিৎ সংক্ষিপ্ত বর্ষা আর সংক্ষিপ্ততর শীত! তা এখনো নিছক অনাগত ভবিষ্যৎ বলে পহেলা আষাঢ়ে চিরন্তন বর্ষাবন্দনায় মেতে উঠতে কার্পণ্য করা ঠিক হবে না।
মাঠে-ঘাটে, বনে-বাদাড়ে ঘুরে প্রকৃতির খোঁজখবর রাখেন এমন কেউ কেউ অবশ্য বললেন, আগেভাগে এক দফা ব্যাপক ফুটে অনেক কদমগাছ এখন ফুলশূন্য। এবারের দীর্ঘ তাপপ্রবাহই কি এর কারণ? এ পর্যন্ত কিন্তু তেমন বেশি চোখে পড়েনি বৃষ্টিস্নাত কদম বা দোলনচাঁপার গুচ্ছ নিয়ে পথশিশুদের ট্রাফিক সিগন্যালে ছোটাছুটি।
বছরভর বাংলার প্রকৃতি হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ সাজে। তার মধ্যে বর্ষার সজল, শ্যামল রূপ অনন্যতায় ভরপুর। ধানের ক্ষেতে রৌদ্র-হাওয়ার লুকোচুরির মতো অপার্থিব দৃশ্য আর কখন মেলে! আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই মাসজুড়ে ব্যাপ্তি বর্ষার। মাস দুয়েক নানা মাত্রায় বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর। টিপটিপ, ঝিরিঝিরি, ইলশেগুঁড়ি, মুষলধার—বর্ষার বারিধারার কতই না নাম! কবিরা তার মধ্যে শোনেন নূপুর, মৃদঙ্গ আর মাদলের বোল।
আকাশের চেহারারও সে কী বৈচিত্র্য! সারা দিন ঘোলাটে থেকে শুরু করে ছাইরঙা হয়ে মোষের মতো কালো। বর্ষার প্রকৃতিতে ডাকাতের মতোই দৌরাত্ম্য চলে মেঘেদের। কখনো কখনো বর্ষণ শেষে সেই মেঘের ফাঁকে হঠাৎ উঁকি দেয় আকাশজোড়া স্বর্গীয় রঙধনু।
একালে অবশ্য আমাদের কেবল বর্ষা নিয়ে কাব্যকথায় বুঁদ হয়ে থাকলে চলে না। বিশেষ করে নগরে বর্ষা মানে মাথায় রাখতে হয় যানজট আর জলজটের কথা। নিম্ন আর মধ্যবিত্তের ঘরে বাজারের ফর্দ আর ছেঁড়া ছাতা নিয়ে কসরত। প্রতিবেশীর ইলিশ ভাজার গন্ধ নাসারন্ধ্রকে বিচলিত করে তুললে তাদের মনকে সান্ত্বনা দিতে হয়, ‘দেখিস একদিন আমরাও!’ তারই বিপরীতে আবার আছে বদলে যাওয়া সময়ের বর্ষাকেন্দ্রিক রিসোর্ট সংস্কৃতি, ‘পাঁচতারা মানের’ হাওর বিহার। উঁচু-নিচু সব শ্রেণিকেই তটস্থ থাকতে হয় এ ভূখণ্ডে বছর কুড়ি ধরে নতুন করে আবির্ভূত ডেঙ্গু নিয়ে।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা স্বভাব-চরিত্র পাল্টে ফেলায় তার সক্রিয়তা অবশ্য বর্ষার গণ্ডি ছাপিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে ইদানীং। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণেই নাকি গ্রীষ্ম-বর্ষা জুড়ে বেড়ে চলেছে বজ্রপাত আর তাতে হতাহতের সংখ্যাও।
বর্ষা শুধু মানুষ না, প্রভাব ফেলে ‘মানবেতর’ প্রাণীর ওপরও। মেঘের গর্জন ছাড়া ময়ূর পেখম মেলে ধরতে চায় না। অনেক প্রাণীর মিলনঋতু বর্ষা। বর্ষার ঘনঘটার জন্য তাদের নিশ্চয়ই আর তর সইছে না।
সময় জার্নাল/এলআর