বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক:
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আগামীকাল রোববার (৭ জুলাই) সারাদেশে রাস্তা অবরোধের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা এটার নাম দিয়েছেন ‘বাংলা ব্লক’। এছাড়া আগে ঘোষিত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থানকালে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। কর্মসূচি ঘোষণা শেষে শাহবাগ মোড় ছাড়েন আন্দোলনকারীরা।
এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা নাহিদ বলেন, আগামীকাল রোববার বিকেল ৩টা থেকে সারাদেশে ‘বাংলা ব্লক’ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করা হলো। সেই সঙ্গে নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।
নতুন এই কর্মসূচির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, শুধু শাহবাগ মোড় নয়, ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল প্রতিটি পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা তারা জেলায়-জেলায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।
‘বাংলা ব্লক’ কর্মসূচিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার ভেবেছে আমরা একদিন দুই দিন আন্দোলন করব এবং একদিন ক্লান্ত হয়ে যাব। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে সারাদেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আজকের ছাত্র সমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না।’
এসময় হলে হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধাদানের কারণে ছাত্রলীগের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নাহিদ বলেন, ‘আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি।’
নাহিদ বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছে জানতে চাই, ২০১৮ সালের পরিপত্র কেন বাতিল করা হলো? শিক্ষকদের আন্দোলন হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। ইতোমধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও সাইন্স লাইব্রেরি খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি না খুলেন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে খুলে নিতে বাধ্য হব।’
এর আগে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর ৩টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করতে থাকে।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে আলাদা ব্যানারে মিছিল নিয়ে কোটা আন্দোলনে যোগ দেন তারা। বিভাগের ব্যানারেও মিছিল নিয়ে আন্দোলনে শামিল হন শিক্ষার্থীরা। যদিও বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রলীগের বাধা প্রদানের খবর পাওয়া গেছে। ঠিক যেই সময় কোটা আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি দিয়েছে, একই সময়ে বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগেরও প্রোগ্রাম রাখা হয়।
এমআই