নিজস্ব প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।অবরোধের ফলে মিরপুর রোডে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে মিছিল নিয়ে রাজধানীর নিউমার্কেট, ইডেন কলেজ ঘুরে সাইন্সল্যাব এসে অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়, দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত’, ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে’, লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা না মেধা মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে কোটা প্রথার কবর দে. সহ নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সাইন্সল্যাব মোড়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কে যানবাহন আটকে আছে। মোড়ের মাঝখানে গোল করে বসে শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছেন। গাইছেন প্রতিবাদী গান। তাদের হাতে কোটাবিরোধী নানা প্ল্যাকার্ড ছিল। অবরোধ চলাকালে পাশেই পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছিলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলবে। দাবি মূলত আমাদের চারটি। এগুলো হলো ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
পরিপত্র অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে (পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ছাড়া)। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজ ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক ব্লকেড (অবরোধ) পালন করা হবে বলে শনিবার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির ফলে সব ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করবেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি বেলা তিনটা থেকে পালিত হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় এবং মহানগর ও জেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শহরে এ কর্মসূচি পালন করবেন। এর পাশাপাশি সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।
২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। সে সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনে ছাত্রলীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার অভিযোগ করেন।
ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন।
সময় জার্নাল/এলআর