রাইসা মেহজাবীন:
এইতো কিছুদিন আগেও দেশের নানান পরিস্থিতির কারণে প্রায় সকলেই থেকেছি ভয়ানক ট্রমার ভেতর!
খাদ্যের মাধ্যমে মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, কারণ কিছু খাবার আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে। মানসিক অস্থিরতা ও স্ট্রেসের সময় কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, চলুন দেখে আসি এক নজরে -
মানসিক চাপ ও অস্থিরতার সময়ে যে খাবারগুলি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক, তার মধ্যে অন্যতম হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের গঠন এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন, সামুদ্রিক মাছ, বিশেষত স্যালমন, ম্যাকারেল, এবং সার্ডিন, এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়া আখরোট, চিয়া সিডস এবং ফ্ল্যাক্স সিডেও ওমেগা-৩ পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক।
মানসিক অস্থিরতা কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাব কমিয়ে দেয়, যা মানসিক চাপ ও অস্থিরতার সময় আমাদের শরীরে অতিরিক্ত উৎপন্ন হয়। ফলমূল ও সবজির মধ্যে যেমন, বেরি, কিউই, কমলা, এবং পালং শাক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। পাশাপাশি, গ্রীন টি এবং ডার্ক চকলেটও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এদের মধ্যে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, বি-ভিটামিনসমূহ (বিশেষত বি৬, বি১২, এবং ফলেট) মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। এই ভিটামিনগুলি সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারগুলির উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা মেজাজ উন্নত করতে সহায়ক। ব্রোকোলি, পালং শাক, কলা, এবং ডিম বি-ভিটামিনের চমৎকার উৎস।
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল যা মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং মানসিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে। বাদাম, বীজ, পালং শাক, এবং অ্যাভোকাডো ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
এছাড়া প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক। প্রোবায়োটিকস অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ইয়োগার্ট, কেফির, এবং সাওয়ারক্রাউট প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রেখে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি আমাদের মেজাজ স্থিতিশীল রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। মাছ, মাংস, ডিম, এবং ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে পানির অভাব হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায় এবং মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা মানসিক অস্থিরতা কমাতে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সর্বোপরি, মানসিক অস্থিরতা এবং স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, এবং ইয়োগা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্যাভ্যাসকে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আপনি মানসিক অস্থিরতা এবং স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
শিক্ষার্থী
গভর্নমেন্ট কলেজ অফ অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স
সময় জার্নাল/এলআর