বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

সাতক্ষীরার সাবেক এসপি-এএসপি-ওসিসহ ২৮ জনের নামে হত্যা মামলা

সোমবার, আগস্ট ১৯, ২০২৪
সাতক্ষীরার সাবেক এসপি-এএসপি-ওসিসহ ২৮ জনের নামে হত্যা মামলা

মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

একজন কলেজ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, তৎকালিন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ওসি মোঃ ইনামুল হকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন রঘুনাথপুর গ্রামের মফিজউদ্দিন সরদারের ছেলে মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী-১ নং আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়াল মামলাটি তদন্ত সপেক্ষে এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের একটি ছাত্রাবাসে আমিনুর রহমানকে হত্যাসহ আরো ৭জনকে গুলি করার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি। নিহত কলেজ ছাত্র আমিনুর রহমান সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন রঘুনাথপুর গ্রামের মফেজ সরদারের ছেলে।

মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সাবেক পুলিশ সুপার ও ত্যকালিন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইনামুল হক, এসআই যথাক্রমে আবুল কাশেম, হুমায়ুন কবীর, আব্দুল হান্নান, হান্নান শরীফ, আবুজার গিফারী, বিধান কুমার বিশ্বাস, ইয়াছিন আলী ও এএস.আই লিটন বিশ্বাস। কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলম, বেলায়েত হোসেন, জিল্লুর রহমান, বাবুল হোসেন, ফারুখ হোসেন, শেখ আলম, হাবিবুর রহমান, রাসেল মাহমুদ, ওমর ফারুক, আব্দুর রহমান, আবিদুর রহমান, আসাদুজ্জামান, মোঃ আলী হোসেন ও বদরুল আলম এবং আ’লীগ নেতা সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর গ্রামের মোঃ আনারুল ইসলাম রনি ও মোঃ বাবর আলী এবং যুবলীগ নেতা এস.এম ইউসুফ সুলতান।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ভিকটিম আমিনুর রহমান লেখাপড়া করার জন্য সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর সরকারি কবরস্থানের উত্তর পাশে জনৈক মুকুলের ছাত্রাবাসের একটি রুমে ভাড়া থাকতো। তার সাথে ওই ছাত্রাবাসে আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, আব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন নামের আরো সাতজন ছাত্র থাকতো। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা ৩টার দিকে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য ভিকটিমগণ সকলে একত্রিত হয়ে দুপুরের ভাত খাওয়াকালীন ছাত্রাবাসের বাহিরের প্রাচীরের গেট ধাক্কানোর শব্দে শুনে শেখ আব্দুল গফুর নামের এক ছাত্র গেট খুলে দেয়। 

এসময় আসামী এসআই আব্দুল হান্নান তার হাতে থাকা পিস্তল আব্দুল গফুরের বুকে ধরে শব্দ করতে নিষেধ করে ভিতরে ঢোকে। এসময় বাইরে অবস্থানকারী আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা অন্যান্য আসামীরা একত্রে বাড়ীর মধ্যে ও খাবার ঘরে ঢুকে খওয়ারত অবস্থায় মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমান সহ অন্যান্য ভিকটিমদের অস্ত্রের মুখে ছাত্রাবাসের বারান্দায় নিয়ে আসে।

সেখানে আসামী এসআই আবুল কাশেম হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা পিস্তল দ্বারা ভিকটিম আমিনুর রহমানকে পিছন দিক থেকে পিঠের বাম পার্শ্বে গুলি করে। গুলি করার সাথে সাথে সে মেঝেতে পড়ে গেলে পায়েও গুলি করে। একপর্যায় গুরুত্বর রক্তাক্ত অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় আমিনুর। যা মামলার স্বাক্ষীরা প্রত্যক্ষ করে। এসময় মামলার স্বাক্ষী অন্যান্য ভিকটিম (আবু তালেব, আক্তার হোসেন, আজিজুল ইসলাম, অব্দুস সবুর, আব্দুল গফুর, নুর মোহাম্মাদ ও ইমরান হোসেন) দের প্রত্যেকের পায়ের হাটুতে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে আসামীরা ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) ব্যবহৃত নিজস্ব ৪টা মটর সাইকেল, বাই-সাইকেল, মোবাইল ফোন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ও জিনিষপত্রাদি নিয়ে আসামীদের ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্স যোগে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য গুরুতর জখমী ভিকটিমদের (স্বাক্ষীদের) একটি এ্যাম্বুলেন্স যোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মৃত ভিকটিম আমিনুর রহমানের ময়না তদন্ত শেষে বাদীর মেজ ভাই মোঃ হাবিবুর রহমান বরাবর লাশ দাফন, কাফনের স্বার্থে হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ প্রহরায় মৃতের বাড়ীতে নিয়ে লাশ দাফন করা হয়। অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎস্যকরা জখমের গুরুত্বর প্রকৃতি অনুধাবন করে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে খুলনা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। পুলিশের তত্ত¡বধানে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স যোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

অতপর, আসামীরা পরস্পর যোগাযোগে সংঘটিত উল্লেখিত ঘটনা ভিন্ন খাতে তথা রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে পরিগনিত কবার স্বার্থে মৃত ভিকটিম সহ অন্যান্য জখমী ভিকটিমদের বিরুদ্ধে আসামীদের হেফাজতে রক্ষিত অস্ত্রাদী দ্বারা মিথ্যা বর্ণনায় সাতক্ষীরা থানার মামলা নং- ৭৫, উদ্ভুত জি.আর- ৩২৮/১৪ (সাতঃ) এবং মামলা নং- ৭৬, উদ্ভুত জি.আর- ৩২৯/১৪ (সাতঃ) মামলা দায়ের করা হয়।

বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. এ.টি.এম বাসারুতুল্লাহ আওরঙ্গী বাবলা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই সময়কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা সম্ভব না হওয়ায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তণ হওয়ায় মামলাটি দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। তিনি আরো জানান, এমামলা দায়েরের সময় তার সহযোগি হিসেবে এড. হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে. তৎকালিন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান পরবর্তীতে সাতক্ষীরাতে জেলা পুলিশ সুপার হয়ে আসলে জেলায় ত্রাসের রাজাত্ব কায়েম করে। জেলা স্বর্ণ পাচারের রুট হওয়ায় পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ১০০ কেজি স্বর্ণ পাচারকারীদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আতœসাৎ করেছে বলে জেলা শহরে রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে পোষ্টার
মেরেছে । সাতক্ষীরাতে তার কার কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে নিরিহ মানুষের ক্রসফায়ারের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল