ডাঃ মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্:
স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক সংকটকালীণ সময়ে এমসিকিউ এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে জনস্বার্থে ২০১০ এবং ২০১১ সালে মোট চার হাজার একশত তেত্রিশ জন চিকিৎসককে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। পরবর্তিতে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনও করা হয়। ২০২২ সালে তাদেরকে পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করা হয়। জাতির জরুরী প্রয়োজনে তাদেরকে নিয়োগ দিয়ে ২০২২ সালে ক্যাডারভুক্ত করার পর গত দুই বছরে তাদেরকে দফায় দফায় পদোন্নতি বঞ্চিত করে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সরকারি চাকুরিতে তাদের চৌদ্দ বছর পূর্ণ হয়েছে। তারা অনেকেই শুরু থেকেই বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেছে, কিন্তু আবেদন গ্রহন করা হয়নি। ফলে বিভাগীয় পরীক্ষা এবং সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় অংশগ্রহনের পথ এমনিতেই বন্ধ থেকেছে। ফলে তারা চাইলেও এগুলোতে অংশগ্রহন করতে পারেননি। তাদের অনেকে পরবর্তিতে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে এডহক থেকে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগদান করে। কিন্তু আবার কাউকে কাউকে বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময় বলা হয়েছে, “আপনাদের এডহক চাকুরিতো নিয়মিতকরণ হয়ে গেছে।” বিসিএস পাস ক্যাডার চিকিৎসক আর এডহক থেকে ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসক উভয়ে তৃণমূল পর্যায়ে জনগনকে একই সেবা দেয়। এমন নয় যে, বিসিএস পাস ক্যাডার চিকিৎসক জনগনকে চিকিৎসাসেবা দেয়, আর এডহক থেকে ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসক দেয় নার্সের সেবা।
এডহক চিকিৎসকগণ জনগণকে স্বাস্থ্যক্যাডারের ভেতরে থেকেই চিকিৎসা দিয়েছেন, স্বাস্থ্যক্যাডারের বাইরে নয়। ফলে সরকারি চাকুরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে নিয়মিত পদোন্নতি পাওয়া এডহক চিকিৎসকদের অধিকার। তারা সরকারি চাকুরি না করে প্রাইভেট খাতে থাকলে এতদিনে তারা অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক থাকতেন। সে সময়টা তারা সরকারি চাকুরিতে ব্যয় করেছেন। শুধুমাত্র চিকিৎসক নিয়োগের জন্য এডহক এর আদলেই শুধু এমসিকিউ এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ৩৯তম বিশেষ বিসিএস এর মাধ্যমে সাড়ে ছয় হাজার এবং ৪২তম বিশেষ বিসিএস এর মাধ্যমে চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এডহক এর মতোই এই দুই বিশেষ বিসিএস এর ক্ষেত্রেও লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। অন্য কোনো ক্যাডারের জন্য বিশেষ বিসিএস নিতে হয় না এবং এত বেশি সংখ্যক নিয়োগ দিতে হয় না। সেকারণে স্বাস্থ্যক্যাডার অন্যান্য ক্যাডার থেকে আলাদা। তাছাড়া ২০২১ সালে কোনো এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষা ছাড়া শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ৩৫০ জনকে সরাসরি উচ্চতর ৬ষ্ঠ গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা ইতোপুর্বে একদিনও সরকারি চাকরি করেননি, বুনিয়াদী প্রশিক্ষন নেননি এবং বিভাগীয় ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দেননি। তাহলে এডহক থেকে ক্যাডারভুক্ত ১৯৮৯ জন চিকিৎসক ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে সরকারি হাসপাতালে সেবা দিয়ে ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পাবে না কেন?
যে চাকরিবিধি দুইজন চিকিৎসককে একই কর্মস্থলে একই কর্মে সমান খাটিয়ে একজনকে ‘ক্যাডার’ আখ্যা দিয়ে পদোন্নতি দেয় আর অন্যজনকে ‘ননক্যাডার’ আখ্যা দিয়ে পদোন্নতিবঞ্ছিত করে; সে চাকরিবিধি স্পষ্টতই বৈষম্যমূলক।
সুতরাং ন্যায্যতার স্বার্থেই এই বৈষম্যমূলক চাকরিবিধি দ্রুত সংশোধন করে সরকারি চাকুরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা দিয়ে এডহক এবং প্রকল্পভুক্ত চিকিৎসকদের ন্যায্য পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। যারা এডহক থেকে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তিতে স্বাস্থ্যক্যাডারে যোগদান করেছেন, তারাও সরকারি চাকুরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকেই জ্যেষ্ঠতা নিয়ে পদোন্নতির অধিকার পাওয়ার যোগ্য।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা , স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের সচেতন দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখকঃ মেডিক্যাল অফিসার, নেফ্রোলজি, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা।