বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আমাদের 'রাজন স্যার'

মঙ্গলবার, অক্টোবর ১, ২০২৪
আমাদের 'রাজন স্যার'

মুরাদ হোসেন

শ্রী রাজেন্দ্রনাথ চৌহান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটঘরিয়া, পাবনা। তবে স্যারকে সবাই "রাজন স্যার" বলেই জানেন।  তিনি আমার শিক্ষাগুরু। লম্বা, শ্যামলা- ফর্সা এ ব্যক্তিটি নিয়মিত পাঞ্জাবি -পাজামা পড়ে বিদ্যালয়ে আসতেন। দূর থেকেও বোঝা যেত তিনি আমাদের 'রাজন স্যার'।

স্যারের বেত যার হাতের উপর পড়বে তার সাতদিনের আগে জ্বর কমবেনা এরকম একটা ধারণা সকল ছাত্রছাত্রীর ছিল। সে বেতের আঘাত আমার উপরও একদিন পড়েছিল। কিন্তু জ্বর তো দূরের কথা একদিনও বিছানায় পড়ে থাকতে হয়নি। মূলত পড়ার জন্য নয়, বরং শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে বেতের ভয়ে রাখতেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীদের সুখে দুঃখে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।

প্রতিবছর স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূল পরিচালনার দায়িত্বে তিনিই থাকতেন। ছেলেদের মোরগ যুদ্ধ, ছেলে মেয়ে উভয়ের দৌঁড় প্রতিযোগিতা, ছেলেদের দীর্ঘ লম্ফ, উচ্চ লম্ফের মতো প্রতিযোগিতা এক হাতে সামাল দিতেন। তবে স্যারের পরিচালিত মেধা পরীক্ষা প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি আনন্দ দিত সবাইকে। তার উপস্থাপনা ছিল হাস্যরস্যময়। নির্লোভী এ মানুষটি সর্বদা গোপালপুরের মানুষের মাঝে সহজেই মিশে যেতেন অনায়াসে।

তৃতীয় শ্রেণিতে (২০০৯) চূড়ান্ত পরীক্ষায় গণিতে পূর্ণ নম্বর পাওয়ায় স্যার খুশি হয়ে অতিরিক্ত ৫ নম্বর যোগ করে ১০৫ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই স্যার আমাকে মুরাদ সাহেব বলে ডাকতেন। এরপর যতদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি প্রত্যেকটা তেই ১০০ নম্বর পেয়েছিলাম। ওই সময় আমার বড় ভাই মো. আব্দুল মোমিন ছিলেন গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যারা শিক্ষক। এরপরের বছর স্যার বিদায় নেন তার ভালোলাগার বিদ্যালয় থেকে। 

 স্যারের শেষ কর্মদিবসে বিদায় অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম। আমার ভাই মো. আব্দুল মোমিন বিদায় সংবর্ধনায় স্যারকে উপহার দেওয়ার জন্য কবিতা প্রিন্ট করে বাঁধাই করে এনেছিলেন। সেই কবিতা আমি আবৃত্তি করে স্যারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।  তখন স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চুমো দিয়েছিলেন। সেদিন খানিকটা লজ্জা পেয়েছিলাম। তবে সেদিন শিক্ষকের গুরুত্ব বুঝতে পারিনি, বোঝার মতো যথেষ্ট বয়সও ছিল না তখন। এখন হলে হয়ত স্যারের পায়ের ধুলো নিতে ভুল করতাম না।

অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। স্যারের সাথে দেখা হয়নি। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে ছেলের সাথে থাকেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্যারের মোবাইল নাম্বার যোগাড় করে দুইবার কথা বলেছি। স্যার প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। স্যার অবসর নেওয়ার পর সপ্তাহের প্রতি হাটবারেই গোপালপুরে আসতেন। দীর্ঘদিনের কর্মস্থল আর মানুষগুলোকে ভুলতে পারছিলেন না। কোথায় যেন শুনেছি, অবসর গ্রহণের পর প্রত্যেক শিক্ষক ঘরে বসে থাকতে বিরক্ত বোধ করেন। তার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি গেলে চেষ্টা করি তাদের খোঁজ নিতে। আমার নিকট একজন রাজন স্যার কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকই অতি গুরুত্বপূর্ণ। 

সময় জার্নাল/তানহা আজমী


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল