সময় জার্নাল ডেস্ক : দীর্ঘ বিরতির পর শনিবার থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া আবার শুরু হচ্ছে। চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দিয়ে ৫ লাখ মানুষকে টার্গেট করে টিকা দেয়া শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বাংলাদেশের কাছে ১১ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে সিনোফার্মের আর ফাইজারের টিকা রয়েছে এক লাখ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ গণটিকাদান কর্মসূচি আবার শুরু করা যাবে সে ব্যাপারে এখনি জানা যায়নি।
গণটিকাদান কর্মসূচি এখনো অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা আতিয়া মাসুদের ইচ্ছা ছিল টিকা নেয়ার। কিন্তু তিনি বিবিসিকে বলেছেন, টিকার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার পর সরকার নতুন করে নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়ার পর তিনি নিবন্ধন করতে না পেরে হতাশ।
‘আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা টিকা নেব এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিবন্ধন করার আগেই সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি অসম্ভব হতাশ। কারণ নিবন্ধন করা থাকলে একটা স্বস্তি পেতাম যে একটা সময়ে টিকা পাব।’
বাংলাদেশে এখন নতুন করে নিবন্ধন করা বন্ধ থাকলেও সরকার শনিবার থেকে চীনের দেয়া সিনোফার্মের টিকা দিয়ে টিকাদান কার্যক্রম আবার সীমিতভাবে হলেও শুরু করতে যাচ্ছে।
কারা পাচ্ছেন সিনোফার্মের এই টিকা?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. শামসুল হক জানাচ্ছেন, চীন দুই দফায় বাংলাদেশকে যে ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা দিয়েছিল সেটা দিয়ে শুরু হচ্ছে টিকা কার্যক্রম। তবে সেটা সবার জন্য নয়।
শামসুল হক জানান, এই ১১ লাখ ডোজ টিকার জন্য ৫ লাখ মানুষকে টার্গেট করা হয়েছে, যাতে করে তাদের দুই ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন করা যায়।
‘আমাদের খুব পরিষ্কার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা ৫ লাখ মানুষকে দুইটা ডোজের টিকা দিয়ে কমপ্লিট করবো। এখানে আগে যারা নিবন্ধন করে রেখেছেন তারা অগ্রাধিকার পাবেন।’
‘এর সাথে প্রবাসী শ্রমিক, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফরা এ টিকায় অগ্রাধিকার পাবেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরাও এ টিকা পাবেন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ৭০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ মানুষের কেউ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন আবার কেউ একটা ডোজ নিতে পেরেছেন।
এক ডোজ দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় আছেন তাদের মধ্যে সাবরিনা শারমীন একজন।
তিনি বলছেন, ‘আমি এবং আমার স্বামী ১৮ এপ্রিল টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলাম। দুই মাস হয়ে গেল কোনো এসএমএস পাইনি। এখন এই এক ডোজ টিকা আমার শরীরে ঠিক কাজ করবে কিনা বা আদৌ পরের ডোজ পাবো কিনা এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে ১২ লাখ নিবন্ধিত মানুষ যারা এক ডোজ টিকাও পায়নি তাদের লক্ষ্য করে এই সিনোফার্ম টিকার কার্যক্রম চলবে।
গণটিকাদান কর্মসূচি এখনো অনিশ্চিত
বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়।
যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ কবে কীভাবে নিশ্চিত করা হবে এ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
সদস্য সচিব মো. শামসুল হক জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার জোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু টিকা হাতে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না তিনি মন্তব্য করেন।
‘চীন, রাশিয়া, কোভ্যাক্সসহ আরো অনেক জায়গায় যোগাযোগ চলছে। এখন মডার্না, নোভাভ্যাক্স, জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন, ফাইজার আবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার কথাও হচ্ছে। এখন যেটা যখন আমাদের হাতে আসবে তখন সেটা নিয়ে আমরা প্ল্যান করতে পারবো।’
এদিকে সরকারের কাছে চীনের ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা ছাড়া হাতে রয়েছে ফাইজারের ১ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ফাইজারের টিকা ঢাকায় তিনটি হাসপাতালে স্বল্প সংখ্যায় পরীক্ষামূলকভাবে দেয়া হবে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা সেটা ৭ থেকে ১০ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপরে ফাইজারের টিকা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবে সরকার। - বিবিসি
সময় জার্নাল/এসএ