মুরাদ হোসেন, হাবিপ্রবি দিনাজপুর:
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই ভুগছেন মানসিক সমস্যায়। তন্মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এতে আক্রান্তদের কেউ তীব্র আবার কেউ প্রারম্ভিক পর্যায়েও রয়েছেন।
তবে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শাফকাত ওয়াহিদ জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে পূর্ণ বয়স্কদের মধ্যে ১৮.৭ শতাংশ, ৭-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২.৬ শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত। তন্মধ্যে ১৩.৭ শতাংশ ছেলে এবং ১১.৫ শতাংশ মেয়ে রোগী রয়েছেন। সব মিলিয়ে বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ২০ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জানান, কোনো কারণে তিনি বেশ কয়েক বছর যাবৎ এ সমস্যায় ভুগছেন। এতে তার প্রাত্যহিক কাজকর্ম ও পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। তার মতে এখানে আরো অনেক শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় জর্জরিত।
মানসিক সমস্যা কিংবা মানসিক ট্রমায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপক প্রবণতা থাকে শিক্ষার্থীদের। দুশ্চিন্তা, আকস্মিক দুর্ঘটনাও এর অন্যতম কারণ, বলেছেন চিকিৎসকেরা।
২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলেন, "ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও মানসিক সমস্যা হতে পারে। মেয়েরা তাদের চেহারা, শারীরিক গঠন নিয়েও অনেক সময় চিন্তিত থাকে। তবে সেশন জট সহ আরো বেশ কিছু কারণ এর জন্য দায়ী বলে মনে করি। একজন শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যা তার ভবিষ্যৎ কে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আত্মহত্যার প্রবণতাও থাকে। এজন্য ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতা জরুরি।"
বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, "পরিবারের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না পাওয়ার দরুণ বিষণ্ণতা থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ সমস্যা যেন কাউকে গ্রাস করতে না পারে সেজন্য গ্রীন ভয়েস হাবিপ্রবি শাখা মনোবিজ্ঞানীদের তত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতায় নিয়মিত সেশনের আয়োজন করে থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক এ আয়োজন করলে প্রতিটি শিক্ষার্থী উপকৃত হবেন।"
এক জরিপে এসেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ২০২১ সালের জরিপে উঠে এসেছিল, হাবিপ্রবি সহ ৯২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের চেয়ে গ্রামে বসবাসকারীদের বিষণ্নতার হার বেশি এবং ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীরা বিষণ্নতায় বেশি ভুগছেন।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবি'র ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. কোরবান আলী জানান, "দেখা গেছে মানসিক সমস্যায় পরামর্শ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাদের একাকিত্ব, ফোবিয়া, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা এসবের জন্য দায়ী। তবে এর চিকিৎসায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ, কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস এবং নিয়মিত কাউন্সিলিং নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।"
পাবনা মানসিক হাসপাতালের সোশ্যাল সাইকিয়্যাট্রি মো. মকবুল হোসেন বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাকরিজনিত চিন্তা, প্রেমে ব্যর্থতা, রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার, ড্রাগ সেবনের কারণে মানসিক সমস্যায় ভুগে।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একটি জরিপে এর হার ছিল ৬.২৭৩ শতাংশ। মানসিক সমস্যায় ঝরে পরার একটা প্রবল সম্ভবনা থাকে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাউন্সিলিং করতে হবে।"
তবে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস এম এমদাদুল হাসান।
সময় জার্নাল/এলআর