মো. নিজাম উদ্দিন : লক্ষ্মীপুরের চররমনীমোহনে চোর সন্দেহে আব্দুস সহিদ নামে এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে হত্যার পেছেনে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে বলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
নিহতের ঘটনায় আব্দুস সহিদের স্ত্রী বিবি কুলছুম বাদি হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এতে চরররমনী মোহন ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল, তার ছেলে আবু সুফিয়ান ও ইয়াকুব ছৈয়াল, তার ভাতিজা বাবুল ছৈয়ালকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া মামলার অন্য আসামীরা হলেন দেলোয়ার মুন্সি, নান্নু রাঢ়ী, এমরান হোসেন, সোহাগ, হুমাযূন, শাকিল, সামাদ, দাদন ও দুলাল চৌকিদার। এতে আরও ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
নিহতের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, পূর্ব থেকে তাদের সাথে জমি সংক্রান্ত মামলা ছিলো। এর মধ্যে মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী বাবুল ছৈয়াল, ২য় আসামী দেলোয়ার মুন্সি ও হুমায়ূনের সাথে পূর্ব থেকে বিরোধ ছিলো নিহত আব্দুস সহিদের।
জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রায় দুই বছর আগে নিহত আব্দুস সহিদ বাদি হয়ে আদালতে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। এছাড়া নিহতের স্ত্রী ও হত্যা মামলার বাদি বিবি কুলছুমের উপরও গত ২৪ এপ্রিল হামলা করে অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় গত ২৫ মে কুলছুম বাদি হয়ে দেলোয়ার মুন্সি, বাবুল ছৈয়াল, গিয়াস উদ্দিন মুন্সী ও হুমায়ূনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। গিয়াস উদ্দিনের সাথেই ২৪ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ ছিলো নিহত আব্দুস সহিদের।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুস সহিদ তার ছেলে শরীফ (২২), সজিব (১৭), সোহেল (১২) ও মারুফ (৯) এবং স্ত্রী কুলছুম নিয়ে চররমনীমোহন ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতেন। নদীতে মাছ শিকারের পাশাপাশি এলাকায় কৃষি কাজ করতেন আব্দুস সহিদ। তার পিতা মৃত হাসেম মোল্লা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়াল ও তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে বিরোধ থাকায় বিভিন্ন সময়ে হামলার মূখে পড়তেন আব্দুস সহিদ। গত ১১ ফেব্রæয়ারী অভিযুক্ত দেলোয়ার মুন্সির বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে আব্দুস সহিদের স্ত্রী বিবি কুলছুমের বিরুদ্ধে চুরির মামলা দিলে তিনি ৪০ দিন কারাভোগ করেন। এরপর থেকেই অভিযুক্তরা
বিভিন্ন সময়ে আব্দুস সহিদ ও তার স্ত্রীকে বিভিন্ন হুমকি দিতেন।
গত ১৪ জুন রাতে আব্দুস সহিদ তার শ্বশুর বাড়ি থেকে মধ্য চররমনী মোহন থেকে নিজ বাড়ি পশ্চিম চররমনী মোহনে যান।
বিবি কুলছুম অভিযোগ করেন, ওইদিন রাত ১০ টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে মামলার অন্য অভিযুক্তরা তার স্বামীকে স্থানীয় একটি খাল পাড়ের সুপারী বাগানে নিয়ে চোর আখ্যা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে তারা সহিদকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। পরদিন সকালে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় আব্দুস সহিদকে উদ্ধার করে। সেখান থেকে তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন সকাল ১০টার দিকে মারা যায় এ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আব্দুস সহিদ। দুপুরে তার মৃতদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে বিকেলে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে তার শ্বশুর বাড়িতে তাকে
দাফন করা হয়।
ঐ রাতেই বিবি কুলছুম বাদি হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে মামলা করার পরেও অভিযুক্ত কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় শঙ্কিত বিবি কুলছুম। ঘটনার বিচার এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার (২০ জুন) সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার স্বামী তার কাছে ঘটনার বর্ণনা করেছেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়ালের নির্দেশে তার ছেলে ও ভাতিজা বাবুল ছৈয়াল এবং আত্মীয় দেলোয়ার মুন্সিসহ অন্য অভিযুক্তরা জড়িত ছিলো। তিন কোন চুরির সাথে জড়িত ছিলেন না। তাকে চোর আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
এ বাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসীম উদ্দীন বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহিৃন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সময় জার্নাল/এমআই