এম পলাশ শরীফ, বাগেরহাট:
মোংলায় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, শিক্ষানুরাগী, অনুবাদক, কবি ও সাহিত্যিক ফাদার রেভা. মারিনো রিগন'র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রবিবার (২০ অক্টোবর) সকালে শেহলাবুনিয়ার ক্যাথলিক গীর্জার সম্মুখে রিগনের সমাধীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়, ফাদার মারিনো রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন।
পরে সমাধি চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সেন্ট পলস্ ধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার ফিলিপ মন্ডল'র সভাপতিত্বে ও শেহলাবুনিয়া ধর্মপল্লী সঞ্জয় সরদার'র পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফাদার মারিনো রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন'র সভাপতি সুভাষ বিম্বাস, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফ্রান্সিস সুদান হাওলার, মনিন্দ্র হালদার, প্রাক্তন শিক্ষক মারিনো দিপ্তী মন্ডল, মোংলা সরকারী কলেজের প্রভাষক ড.অসিত বসু, প্রভাষক মাহবুবুর রহমান, মোংলা সরকারী কলেজের প্রাক্তন ভাইস প্রিন্সিপাল বিভাষ বিশ্বাস, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার জয়ন্ত এন্ড্র কস্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক জানে আলম বাবু, সেবা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মিনা হালদার প্রমুখ।
এদিকে রিগন স্মরণে ভোরে সেন্ট পলস ধর্ম পল্লীর আয়োজনে শেহলাবুনিয়া ক্যাথলিক গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, শিক্ষানুরাগী, অনুবাদক, কবি ও সাহিত্যিক ফাদার মারিনো রিগন ১৯২৫ সালে ৫ ফেব্রুয়ারী ইতালির ভিল্লাভের্লা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। এরপর খ্রীষ্ট এ ধর্মযাজক তার জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মোংলার শেহলাবুনিয়া পল্লীতে। শেহলাবুনিয়া থাকাকালীন অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জন্ম মাটি ইতালিতে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ফাদার মারিনো রিগন মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর ফাদার রিগনের মরদেহ ইতালি থেকে এনে মোংলার শেহলাবুনিয়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
জন্মসূত্রে ফাদার রিগন ইতালি নাগরিক হলেও বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে তাঁকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদাণ করেন। এছাড়া ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদাণ করা হয়। লালনের সাড়ে তিনশো গান, গীতাঞ্জলিসহ রবীন্দ্রনাথের ৪৮টি বই এবং কবি জসিম উদ্দিনের নক্সীকাঁথার মাঠ, নির্বাচিত কবিতা, সুজন বাদিয়ার ঘাট ইতালি ভাষায় অনুবাদ করে বাংলা সাহিত্যে উচ্চ আসনে আসীন হয়ে আছেন ফাদার মারিনো রিগন।
তার হাত দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মোংলার স্বনামখ্যাত স্কুল সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় মোংলা এলাকায় গড়ে উঠেছে আরও ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তার উদ্যোগে সজীব হয়ে উঠেছে শেলাবুনিয়া শেলাই কেন্দ্র ও সেন্ট পলস হাসপাতাল।
সময় জার্নাল/এলআর