২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জন্য ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট ছিল এক হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। ৩ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
করোনাকালীন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু যখন আইসিটি খাতের ওপর সর্বাধিক নির্ভরশীল, তখন এ খাতের উদীয়মান সেক্টর মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের উপর বাজেটে ৪০ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারণ করেছে সরকার। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এ খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এবারের বাজেটে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের উপর উচ্চহারের যে ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে তা এ সেক্টরের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করেন এ খাতের তরুণ উদ্যোক্তা এবং ফিনটেক এক্সপার্ট রেদওয়ানুল করীম আনসারী। সময় জার্নালের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি আইসিটি খাতের বাজেটসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য আলাপচারিতার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
সময় জার্নাল : এবারের বাজেটে আইসিটি খাতের মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের উপর সরকার ৪০ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারণ করেছে। এ খাতের উদ্যোক্তা হিসেবে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
রেদওয়ানুল করীম আনসারী : ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে এবং এমএফএসের মত অনেকগুলো সেবা রয়েছে। এজন্য কোন কোন খাতে ৪০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে তার উপর পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। এমএফএস সেক্টরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে। সবাই কিন্তু বিকাশ কিংবা নগদের মতো এতো বৃহৎ পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা করে না। আবার অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিনিয়োগে পরিচালিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সবার জন্য একই পরিমাণ ট্যাক্স রেট কার্যকর হলে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। আবার যে সকল নতুন উদ্যোক্তা ও বিদেশি বিনিয়োগকারিরা এ সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। সেক্ষেত্রে এই সেক্টরে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্থ হবে। এজন্য এমএফএস সেক্টরের কোন কোন খাতে ৪০ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করা হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলে নতুন ও পুরানো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ট্যাক্স ধার্য সংক্রান্ত বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তাছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক লেনদেনের পর পরবর্তী লেনদেনের উপর এ ট্যাক্স কার্যকর করা হলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা আরও বেশি ব্যবহার করবে।
সময় জার্নাল : হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যারের উচ্চমূল্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এক্ষেত্রে দাম কমানোর কোন উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা?
রেদওয়ানুল করীম আনসারী : আইসিটির ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারের তুলনায় আমাদের মার্কেটটা অনেক ছোট। বিশ্ববাজারে তুলনামূলক বেশি কোম্পানী কাজ করার ফলে দাম কমানো বাড়ানো নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা থাকে। এছাড়াও অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় আইটি সেক্টরে খরচ অনেক বেশি। তাই সার্ভিসের উপর নির্ভর করে দাম কমে বাড়ে।
সময় জার্নাল : করেনাকালে ই-কমার্স সেক্টর বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বাজেটে আরোপ করা ট্যাক্স এ খাতে কোন বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে কিনা?
রেদওয়ানুল করীম আনসারী : বর্তমান বাজেটে মুলত ই-কমার্সের পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানীগুলোর উপর ৪০ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোন সমস্যা না হলেও ক্ষুদ্র এবং নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কষ্টকর হবে। যার ফলে ই-কমার্স সেক্টর বিশাল একটা ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে ই-কমার্স কোম্পানীগুলো ক্যাশ অন ডেলিভারির দিকে ঝুঁকবে। এতে সরকার অনেক রাজস্ব হারাবে। তাই আমি মনে করি এই বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর পর্যালোচনা প্রয়োজন।
সময় জার্নাল/এসএ