শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ভয়াল সিডরের ১৭বছর: টেকসই বেড়িবাঁধের দুঃখ গেলনা মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা বাসীর

শুক্রবার, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
ভয়াল সিডরের ১৭বছর: টেকসই বেড়িবাঁধের দুঃখ গেলনা মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা বাসীর

এম.পলাশ শরীফ,  বাগেরহাট: 

আজ ১৫ নভেম্বর বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ-শরণখোলাসহ উপকূলবাসীর এক দুর্বিষহ দিন। ২০০৭ সালের এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল স্মরণকালের প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। দানবরূপি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে শরণখোলাতেই মারা যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ। বিধ্বস্ত হয় অসংখ্য গাছপালা, ঘরবাড়ি। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় সেদিন জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপূরী আর ধ্বংসস্তুপে পরিণত শরণখোলা।

সিডরের পর স্বজন আর সহায়সম্বলহারা মানুষের একটাই দাবি ছিল ‘ আমরা ত্রাণ চাইনা, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই,। এই দাবিতে কয়েকবছর ধরে চলে আন্দোলন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে এসে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ। বলেশ্বর নদের তীররক্ষায় প্রায় ২০ কিলোমিটারসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের মোট ৬২ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে সিএইচডব্লিউই নামে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবাণ করে। কিন্তু নদী শাসনের ব্যবস্থা না করে বাঁধ নির্মাণ এবং কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হওয়ায় হস্তান্তরের পর বছর যেতে না যেতেই সেই বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বলেশ্বর নদের তীরে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী থেকে মোরেলগঞ্জ সীমানার সন্ন্যাসীর ফাসিয়াতলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ৯ কিলোমিটার মূল বাঁধসহ সিসি ব্লক ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।  

এমন ভয়াবহ ভাঙন দেখে শরণখোলাবাসীর আক্ষেপ, সিডরের ১৭ বছর পর এসেও বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটছে বলেশ্বর নদের তীরের বাসিন্দাদের। নদতীরবর্তী গাবতলা গ্রামের বাসিন্দা মিজান হাওলাদার, দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, উত্তর সাউথখালী গ্রামের আনোয়ার হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ ছিলোনা বলে সিডরে আমরা স্বজন হারিয়েছি। ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে একটি টেকসই ও উঁচু বেড়িবাঁধ চেয়েছিলাম। উচুঁ বাঁধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা টেকসই হয়নি। নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় বছর না যেতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থা করা না হলে দুই-তিন বছরের মধ্যেই বাঁধ ভেঙে বিলিন হয়ে যাবে।

ভাঙনকবলিত সাউথখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পঞ্চায়েত বলেন, নদী শাসন ছাড়া টেকসই বাঁধ হওয়া সম্ভব নয়।  তৎকালীন সরকার ও বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণে নদী শাসনের ব্যাবস্থা না রেখে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে এখানে। মাটির বদলে নদীর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এতে শুধু বাঁধ উঁচুই হয়েছে, কিন্তু টেকসই হয়নি। দ্রুত নদী শাসন না করলে টই কোনোভাবে টিকবে না। বর্তমান সরকারের কাছে দূর্নীতি তদন্ত ও নদী শাসন করে বাঁধ রক্ষার দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।  

নদী শাসন এবং ধসে যাওয়া বাঁধ ও সিসি ব্লক মেরামতের ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নায়ন বোর্ডের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, বলেশ্বর নদের তীররক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পূর্ণ  এলাকার নদী শাসন করতে হলে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।  আপাতত জাইকার অর্থায়নে স্বল্প পরিসরে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে চলতি মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল