বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

হার্ট অ্যাটাক এর কারণ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়

বুধবার, জুন ২৩, ২০২১
হার্ট অ্যাটাক এর কারণ ও ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়

ডা. ইসমাইল আজহারি: বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮ লক্ষ পুরুষ এবং ৩৪ লক্ষ মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার মধ্যে  প্রতি ৪ জনের একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে করোনারি হার্ট ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ যা মূলত এথোরোসক্লেরোসিস এর ফলাফল।

এথোরোসক্লেরোসিস কি?

Athero+Sclerosis থেকে এথোরোসক্লেরোসিস শব্দটা এসেছে। এথোরো মূলত  Atheroma থেকে এসেছে। আর্টারি বা ধমনির ওয়ালে ফ্যাটি ম্যাটেরিয়াল বা চর্বি জাতীয় বস্তু কিংবা স্কার টিস্যু জমা হয়ে যখন ধমনীর ওয়াল সমূহ মোটা হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে ধমনীর লুমেন সরু হয়ে যায় এবং রক্তপ্রবাহ কমে  হয়ে যায় সেই সাথে আর্টারি সমূহ শক্ত হয়ে যায় তখন এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলা হয়।

সহজ কথায়, যদি কোনো ফ্যাটি প্ল্যাক এর কারণে রক্তনালী দিয়ে রক্ত চলাচল সীমিত হয়ে যায় তখন এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে।

এথোরোসক্লেরোসিস বলতে মূলত হার্ট এর ধমনী সমূহে তথা করোনারি আর্টারি সমূহের মধ্যে ডিজেনারেটিভ চেঞ্জকে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে এথোরোসক্লেরোসিস শরীরের যে কোনো রক্তনালিতে হতে পারে। হাতে পায়ে হলে তখন সেটাকে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ বলা হয়।
শরীরে যদি অতিরিক্ত LDL ক্লোরেস্টেরল থাকে তখন সেটা রক্তনালীতে জমা হয়ে এথোরোসক্লেরোসিস তৈরি করে। করোনারি আর্টারিতে এথোরোসক্লেরোসিস হলে সেখানে রক্ত প্রবাহ কমে যায় কিংবা রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় আর যেখানেই রক্ত প্রবাহ কমে যায় বা রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় সেখানে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। কারণ রক্তের হিমোগ্লোবিন এর সাথে মিশেই অক্সিজেন সারা দেহে সঞ্চালিত হয়।  শরীরের কোনো টিস্যুতে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে তাকে ইসকেমিয়া বলে। আর হার্টের মধ্যে যদি অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় তাহলে এই অবস্থাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে।

হার্ট অ্যাটাকঃ

হার্ট এর মাংশপেশী সমূহ সচল থাকার জন্য হার্টের মধ্যে রক্ত সরবরাহ হয় দুইটা রক্ত নালীর মাধ্যমে যাকে রাইট এন্ড লেফট করোনারি আর্টারি বলে। এই করোনারি আর্টারি সমূহে ফ্যাট কিংবা চর্বি জমে যদি রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এই অবস্থাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলে এই অবস্থাকে আবার হার্ট ব্লক ও বলা হয়  আর ফ্যাট জমে আর্টারি মোটা আর শক্ত হয়ে যাওয়াকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে। এথোরোসক্লেরোসিস হলে যে কোনো মুহুর্তে রক্তনালি ছিড়ে রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। রক্তনালীর ভিতর যদি রক্ত জমাট বাধে তাহলে সেখানে রক্ত চলাচল করতে পারবে না, হার্টের রক্তনালীতে যদি রক্ত চলাচল করতে না পারে তাহলে হার্টের মাংসপেশি সমূহ অক্সিজেন পাবেনা, অক্সিজেন না পেলে হার্টের টিস্যু সমূহ ড্যামেজ হতে থাকবে এবং এইভাবে হার্টের রক্তনালীতে রক্তজমাট বাধার কারণে কিংবা শরীরের অন্য কোনো ধমনীতে রক্ত জমাট বেধে তা থ্রম্বোসিস হয়ে তথা রক্তনালী দিয়ে পরিবাহিত হয়ে যদি করোনারি আর্টারি সমূহকে কিংবা হার্টের ধমনী সমূহকে ব্লক করে দেয় এবং হার্টের পেশীসমূহে যদি পরিমিত অক্সিজেন দিতে না পারে তখন অক্সিজেনের অভাবে হার্টের টিস্যু সমূহ ড্যামেজ হয়ে যাবে যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক বলা হয়।

এই সময় খুব দ্রুত রক্ত সরবরাহ চালু করতে না পারলে মৃত্যু হতে পারে। এই সময় রোগীর প্রচন্ড বুকে ব্যাথা হবে, সাথে শ্বাসকষ্ট হবে, শরীর ঘামিয়ে যাবে,  ব্যাথা ঘাড়, হাত, পিঠে বা থুতনিতে যেতে পারে।

ইশকেমিক হার্ট ডিজিজ  এর উপসর্গঃ

ব্লাড প্রেশার চেক করা না হলে অধিকাংশ রোগী উপসর্গহীন থাকে এবং এক সময় তারা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরণ করে। 

আর কারো কারো ক্ষেত্রে নিম্নের কিছু উপসর্গ দেখা দেয়ঃ

১। চলতে ফিরতে বুকে ব্যাথা হয়
২। শ্বাসকষ্ট হয়
৩।খাবার পরে বুকে ব্যাথা হয়,
৪।একটু টেনশন করলে বুকে ব্যাথা হয়,
৫। মাথা ঘোরানো এবং মাথা ব্যাথা
৬।ঘাড় কিংবা বাহুতে ব্যাথা
৭। বমি বা বমির ভাব

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণ-

১।উচ্চ রক্তচাপ  বা হাইপারটেনশন 
২। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যথা গরুর গোস্ত, ডিম বা ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার ইত্যাদি
৩। সিগারেট স্মোকিং বা জর্দা ইত্যাদি 
৪।অবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন
৫। এলকোহল, কোমল পানীয়
৬।পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা
৭। শারিরীক পরিশ্রম না করা
৮। সবসময় শুয়ে থাকা ইত্যাদি।

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ  এর কারণে জটিলতাঃ

১।হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
২।ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে


প্রতিকার:

১। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে
২।ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
৩। ওজন স্বাভাবিক বিএমআই  অনুযায়ী রাখা জরুরী।  ওজন
  নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
৪। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং লবণ কম খেতে হবে।
৫।নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত
৬। স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।

চিকিৎসা:

১।লাইফ স্টাইল মোডিফাই করতে হবে এবং অতিরিক্ত ওজন কমার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। 

২। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সে জন্য নিয়মিত রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন বাদ দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে খুব খেয়াল রাখতে হবে। কোন মেডিসিন যেন খেতে ভুলে না যায়।এছাড়া যে কোন জটিলতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুকে ব্যাথা হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

লেখক: ডা. ইসমাইল আজহারি, চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল