ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম:
সম্পর্কের বাঁধনগুলো যে সবসময় ফুলের মতো নরম থাকবে, এমনটা নয়। বরং অনেক সময় কাছের মানুষদের কাছ থেকেই আসে সবচেয়ে বড় আঘাত। স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়া, পারস্পরিক অবিশ্বাস, কিংবা লোভনীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনে ধসে যায় বহু সংসার।*
সম্প্রতি এক ব্যথিত পিতার সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হলো। তিনি অসহায় হয়ে বললেন, কীভাবে তার কন্যা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অথচ সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই। তবুও বললাম—এটা খুব সাধারণ ঘটনা, যা প্রায় ৮০ শতাংশ নারীর জীবনে কোনো না কোনো সময় ঘটে।
আজকাল অনেক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেই ‘বিশ্বাস’ একটি ভঙ্গুর শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের পথচলায় কখনো স্বামী, কখনো স্ত্রী এমন সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছেন, যা ভেঙে দিচ্ছে সংসারের ভিত। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বা বড় শহরগুলোতে ‘পার্টি কালচার’ বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে নারীরা ধনী পুরুষের সন্ধানে থাকেন। বিবাহিত বা অবিবাহিত, সে ব্যাপারে খুব বেশি ভাবনা থাকে না। আবার, চরিত্রহীন পুরুষরাও এই ফাঁদে পা দেন।
পুরুষের মনোযোগ কীভাবে অন্য নারীর দিকে ধাবিত হয়?
এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো পুরুষদের সহজাত আকর্ষণ এবং নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহ। দীর্ঘদিন এক নারীর সঙ্গে থাকলে পুরুষের মনে একঘেয়েমি চলে আসে, ফলে তারা অভিজ্ঞ, আত্মবিশ্বাসী বা চতুর নারীর দিকে ঝুঁকে পড়েন। অপরদিকে, নববিবাহিতা বা আনকোরা নারীরা অনেক সময় এই মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হন।
তবে, নারীরাও এই চক্রের বাইরে নন। চতুর পুরুষেরা ধনী নারীদের টার্গেট করে, যাতে তাদের আর্থিক সুবিধা নেওয়া যায়। প্রেম-ভালোবাসা, আকর্ষণ—এসব যে কেবল হরমোনের খেলা তা নয়, বরং সম্পর্কের মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ঘাটতি থাকলেও সমস্যা তৈরি হয়।
ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষা:
গোঁড়া ধর্মীয় পরিবারে বেড়ে ওঠা মেয়েরা শিখে আসেন যে, পুরুষের স্পর্শ মানেই পাপ। এই মানসিকতা অনেক সময় তাদের দাম্পত্য জীবনে সংকোচ তৈরি করে, যা পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রীর দূরত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সুযোগেই অন্য নারীরা এসে জায়গা করে নেন।
প্রযুক্তির যুগে সম্পর্কের জটিলতা:
আজকের দিনে প্রযুক্তি সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলেছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে মুহূর্তেই জানা যায় সঙ্গীর অতীত ইতিহাস বা চলমান সম্পর্কের খবর। ফলে সন্দেহ আর অবিশ্বাস বাড়ে।
সমাধানের পথ কী?
- খোলামেলা আলোচনা: দাম্পত্য জীবনে সৎ ও খোলামেলা আলোচনা অপরিহার্য। পারস্পরিক সন্দেহ দূর করতে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করা উচিত।
- আত্মনিয়ন্ত্রণ: আকর্ষণ বা মোহ থাকা স্বাভাবিক, তবে আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং নৈতিকতা রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব।
- পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করা: সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিতে হবে।
- কাউন্সেলিং ও মানসিক সহায়তা: সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে বের হতে প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সেলিং নিতে হবে।
জীবনে ভালোবাসা থাকবেই, তবে সেটি টিকে থাকে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের মাধ্যমে। সম্পর্কের জটিলতা মেনে নিয়েও যারা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন, তারাই প্রকৃত জয়ী।
লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
কলামিস্ট, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ।