মাহমুদুল হাসান, কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫ম তলা থেকে পড়ে এক নির্মাণ শ্রমিক (রং মিস্ত্রি) নিহত হয়েছেন। রোববার (২৭ জুন) দুপুরের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম ফারুক (২৫)। তার বাড়ি কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার দক্ষিণ বাঘমারায়।
দুর্ঘটনার পর তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগ থেকে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিপ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ খোলার প্রস্তুতি হিসেবে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হল ও তিনটি একাডেমিক ভবন সংস্কার কাজ চলছে।
তবে সংস্কার কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের পক্ষ থেকে তেমন কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করতে হচ্ছে বলে দাবি করেন একাধিক শ্রমিক।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি আব্দুল হালিম বলেন, যে শ্রমিক মারা গিয়েছে তিনি রং এর কাজ করছিল। আর তিনি যার আন্ডারে কাজ করছিল আমরা তাকে রং এর কাজটা কন্টাক্ট দিয়েছি। তাই তারা নিজেরা একটু সতর্ক থাকা দরকার ছিল।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরাইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজল খান বলেন, আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তার চেষ্টা করেছি তবুও এটা ঘটে গেল। যিনি মারা গিয়েছেন তিনি ভুলবশত ভাল করে বেল্ট লাগায়নি। তাই পড়ে গিয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তার প্রতিষ্ঠান থেকে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে কোনো আর্থিক সহায়তা করা হবে কিনা জানতে চাইলে ফজল খান বলেন, আমরা অবশ্যই তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করবো। আমি মনে করি এ মানবতা দেখানো উচিত। আমরা তো জানি তারা গরিব মানুষ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান ও প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফকে বারবার ফোন দেয়া হলেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ জুলহাস মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছে এরকম বেশিরভাগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়েই শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করায়। তাই প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে।
নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় বারবার শ্রমিক পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আমরা সবসময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলি যেন নিরাপত্তা বেষ্টনি নিশ্চিত করে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করায়। কিন্তু পূর্ণ নিরাপত্তা বেষ্টনির অভাব ও মাঝে মাঝে শ্রমিকদেরও বেখেয়াল হওয়ায় এমন দুর্ঘটনা ঘটে। আজকের এ ঘটনায় সম্পূর্ণ দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
প্রসঙ্গত, এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের নির্মাণাধীন ভবন থেকে শ্রমিক পড়ে গিয়ে একজন শারীরিকভাবে অক্ষম ও আরেকজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো। বারবার এরকম দুর্ঘটনার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সময় জার্নাল/এমআই