বুধবার, জানুয়ারী ২২, ২০২৫
অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন ইটভাটায় প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই ইটভাটাগুলো। জেলা ও জেলার বাইরের বনাঞ্চলের গাছ ধ্বংস করে লাখ লাখ টন কাঠ পোড়ানো চলছে ভাটাগুলোতে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই চলছে এসব ইটভাটা। কোনো কোনো ভাটার তাও নেই। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। উজাড় হচ্ছে বনজ সম্পদ।
সরকারি হিসেবে জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫৫টি ইটভাটা থাকলেও এ বছর নতুন করে স্থাপিত ১০টি ভাটাসহ মোট ১৬৫ টি ভাটায় ইট পুড়ছে। এদের বেশিরভাগেরই অনুমোদন নেই। অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৮০ ভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। অনেকে ভাটার ভেতরেই ভ্রাম্যমাণ স’মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধে প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো নজরদারি নেই। আর নজরধারি না থাকায় ইট ভাটার ভেতরেই স্থাপন করা হয়েছে স মিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৬ একর জমির প্রয়োজন হয়। ইটভাটার মালিকরা জমির মালিকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমে যাচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ১৬ ধারায় বলা আছে, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করেন, তাহলে তিনি অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
রামগতির চর আফজাল গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ বলেন, যত্রতত্রো এসব ইটভাটার কারনে মানুষের বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা কঠিন ও মারাক্তক হমকির মুখে রয়েছে এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বলেন-প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ইটভাটার মালিকরা কাঠ পোড়াচ্ছে। অধিকাংশ ইটভাটাগুলো রাস্তার পাশেই। ভাটার ধোঁয়া ও ধুলায় আমাদের চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ভাটার মাটি বহনের সময় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে।
এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। নানামুখি সমস্যা তৈরি করছে ইটভাটাগুলো।
সিবিএল ব্রিকসের মালিক চৌধুরী জানান, ভাটায় আগুন দিতে তিন থেকে চারশ মন কাঠ লাগে। কিন্তু জিগজাগ ভাটা (হাওয়া ভাটা) তৈরি করতে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কাঠ পোড়ানোর ফিক্সড চিমনির ভাটা ২৫ লাখ টাকা হলেও তৈরি করা সম্ভব। যে কারণে ফিক্সড চিমনির সংখ্যা বেশি।
লক্ষ্মীপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা.কাজী আবদুল মোমিন বলেন, কাঠ পোড়ানোর ফলে ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় মানুষের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও অতিরিক্ত কার্বনডাই অক্সাইডের কারণে মাঠের ফসল ও এলাকার পরিবেশ দূষণ হয়। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই দূষণ খুবই ক্ষতিকর। মহামারী দেখা দেওয়ার আগেই কাঠপোড়ানো অবৈধ ইটভাটাগুলোকে একেবারেই বন্ধ করা উচিৎ।
সামাজিক সংগঠন আলটার নির্বাহী পরিচালক সাহাবুদ্দীন বলেন, আমরা ভাটা মালিকদের কাঠ পোড়াতে নিষেধ করেছি। তবে কাঠ পোড়ানোর বিষয়টা পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ স’মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই করলে অবশ্যই সেটা বাজেয়াপ্ত করা উচিৎ বলে মনে করি।
পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুরের উপ-পরিচালক হারুনুর রশিদ পাঠান বলেন, গত বছর আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিল না তাই আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এবার আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট আছে। কোনো ভাটাতেই কাঠ পোড়াতে দেব না আমরা। খুব শিগগির অভিযান পরিচালনা করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা বলেন-পরিবেশ রক্ষার্থে আমরা বন বিভাগকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবো। কিছুতেই কাঠ পোড়াতে দিবো না।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, ভাটায় আগুন দেওয়ার জন্য কিছু কাঠ পোড়ানোর আবেদন করেছিল ভাটা মালিকরা। তবে এর থেকে অতিরিক্ত কাঠ পোড়ালে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে কাঠ পোড়ানো বন্ধ করা হবে।
এ আই