জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
“মানবিক,দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।” "শুক্রবার(২৪ জানুয়ারি) সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী’র বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, "কার ইঙ্গিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এবং কেন এখনো এর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি, তা অবশ্যই জনগণের জানা উচিত। জনগণের এই বিষয়ে জানার অধিকার রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের অযোগ্যতা ও ইচ্ছার অভাবের কারণেই তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন আজও সম্ভব হয়নি।"
ড. শফিকুর রহমান আরও বলেছেন, "রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মঠ ভাঙচুর, ঘরবাড়ি ধ্বংস, এবং অগ্নিসংযোগের সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা সরাসরি জড়িত ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, দেশে যা কিছু চুরি হয়, হারিয়ে যায়, বা লুটপাট হয়, তার জন্য সবসময় 'কেষ্ট বেটা'কে দায়ী করা হয়। তদুপরি, প্রতিটি ঘটনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নাম টেনে আনা হয়, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।"
তিনি আরও বলেন, "কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু সেটির কেবল মাত্র একটি কঙ্কাল রয়েছে, না আছে মাংস, না আছে চামড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাসই নেই। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি যদি সঠিকভাবে গড়ে তোলা হতো, তবে এটি এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারত।"
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার এবং তার সহযোগীরা ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “এই অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্ত করা উচিত এবং যে কোনো উপায়ে এই টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে পাঠাতে হবে।”
তিনি জামায়াতের লক্ষ্য হিসেবে বৈষম্যহীন এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মজলুমদের দল। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তবুও আমাদের সংগ্রাম থামেনি। আমরা প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।”
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে কুড়িগ্রামের ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন এবং দাবি করেন, এর প্রতিশোধ নিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা অন্যায়, চাঁদাবাজি বা সামাজিক অনাচার মেনে নেব না। এ জন্যই আমরা রাজনীতি করি, সত্য প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য।”
ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, গত ১৫ বছরে জামায়াতের দুই আমির, একজন সেক্রেটারি জেনারেল, তিন নায়েবে আমিরসহ মোট ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “মুমিনরা কখনো কারও কাছে মাথা নত করে না। ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, "বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ফেলানী খাতুনের করুণ মৃত্যু আজও সবার মনে অমলিন দাগ কেটে রেখেছে।সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ১৫ বছরের নিরপরাধ কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে। তার লাশ দীর্ঘ সময় কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকার সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য আজও মানবতার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকী।সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাও: মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, “এখন দেশের মানুষ আর কোনো জুলুমকারীকে সহ্য করবে না। এক জালেম পালিয়েছে, নতুন জালেম এলেও তাকেও বিদায় করা হবে। মানুষ মুক্তি চায়, তারা জুলুমের শাসন থেকে মুক্ত হতে চায়।”
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকী বলেন, “ফ্যাসিবাদীরা জনগণের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাদের সঠিক জবাব দিয়েছে। আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে মানবিক বাংলাদেশ গড়ব।”
বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আঃ আজিজ নাহিদ বলেন, “তরুণরা কখনো হার মানেনি এবং কখনো হার মানবে না। তাদের সাহস, দৃঢ়তা এবং ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করার অদম্য মনোভাবই তাদের প্রকৃত শক্তি।”
সম্মেলন শুরুর আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সংখ্যা ছিল ব্যাপক। জনসমাগম এত বেশি ছিল যে, কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত সম্মেলনটি সকলের নজর কাড়ে। অনুষ্ঠানজুড়ে “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার” স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
জামায়াত নেতারা এই সম্মেলনকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন, মানবিক এবং শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়া। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করব।”
এ্মআই