শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

যেভাবে হলেন স্বপ্নের সংবাদ উপস্থাপক

বুধবার, জুন ৪, ২০২৫
যেভাবে হলেন স্বপ্নের সংবাদ উপস্থাপক

মাহমুদুল হাসান জাহিদ - বর্তমান সময়ের একজন পরিচিত সংবাদ উপস্থাপক, যিনি এখন বাংলাভিশন টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাসী, সাবলীল ভঙ্গিমায় সংবাদ পাঠের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। তবে এখানে আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। সংবাদ উপস্থাপনায় তার যাত্রা শুরু হয় দীপ্ত টিভি থেকে। এরপর একে একে কাজ করেছেন বৈশাখী টিভি ও নিউজ ২৪ টিভি-তে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য তাকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম, পাড়ি দিতে হয়েছে নানা চ্যালেঞ্জের পথ।

স্বপ্নের পেশায় আসার সেই গল্প শুনিয়েছেন নিজ মুখেই। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহিদ আহনাফ 

সময় জার্নাল:  ভাইয়া কেমন আছেন?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

সময় জার্নাল: একদম ছোট বেলা থেকে জানতে চাই। ছোট বেলা কোথায় কেটেছে আর ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিলো কি না সংবাদ উপস্থাপক হবার?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : আমার জন্ম, বড় হওয়া ঢাকাতেই। মিরপুর, যাত্রাবাড়িতে ছেলেবেলার সময় পার করেছি। আর সত্যি বলতে ছোট বেলায় কোনদিনও মিডিয়ায় আসবো এমন স্বপ্ন মনে আসেনি।

সময় জার্নাল: মিডিয়ায় আসার স্বপ্নটা তবে কবে থেকে?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : ক্লাস এইট-নাইনে থাকতে বিতর্ক, লেখালেখির সুবাদে সাংবাদিকতায় একটা আগ্রহ তৈরি হয়। আর সে সময়টায় এফএম রেডিও তুমুল জনপ্রিয় ছিলো। তাই ইচ্ছে ছিলো আরজে হবো। পরে আরজে না হলেও সংবাদ উপস্থাপনায় যাত্রা শুরু হয়।

সময় জার্নাল: ক্লাস এইট নাইনের কথা বললেন। সেই সময়ের স্বপ্নটা সত্য হয়ে ধরা দিলো কবে?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : এসএসসির পর থেকেই মিডিয়ার সেক্টর গুলো সম্পর্কে জানা শুরু করি। ঐ যে আরজে হবার যেই ইচ্ছা ছিলো। সে অনুযায়ী উচ্চারণের কোর্স, উপস্থাপনার কোর্স করি। ততদিনে এফএম রেডিওর জায়গাটা সংকীর্ণ হয়ে যায়। পরে সংবাদ উপস্থাপক হবার চেষ্টা করতে থাকি। বিবিএ থার্ড ইয়ারে এসে আমার অন এয়ার হয়।

সময় জার্নাল: কোর্সের পরেই কি অন এয়ার হয়ে গেছেন?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : নাহ, কোর্স শেষ করার পরও প্রায় ৩ বছরের মত সময় লেগেছিলো। ওই পুরোটা সময়ই নিজেকে প্র‍্যাক্টিসের মধ্যে রাখতে হয়েছিলো।

সময় জার্নাল: কি ধরনের প্র‍্যাক্টিস করেছিলেন?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : প্রতিনিয়ত পত্রিকা পড়া, চলমান আলোচিত ঘটনা গুলো নোট করা, দমের ব্যায়াম, মুখ ও চোয়ালের ব্যায়াম, স্ক্রিপ্ট প্র‍্যাক্টিস থেকে শুরু করে সব রকম প্র‍্যাক্টিসের সাথে থাকতে হয়েছে। কারণ কখন হুট করে অডিশনের ডাক আসে সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতাম সব সময়।

সময় জার্নাল: প্রায় ৭ বছর এ পেশায় আছেন, এ পেশায় যুক্ত হবার ক্ষেত্রে কোন কোন গুণগুলো থাকা জরুরী?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ :এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরী দেশ-বিদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি-খেলাধুলার মৌলিক বিষয় গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা। তারপর জরুরী বিষয় শুদ্ধ উচ্চারণ, পড়ার স্টাইল, বাচনভঙ্গি ইত্যাদি। আর সেই সাথে আত্মবিশ্বাস, ঠান্ডা মাথায় যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলার গুণগুলো অত্যন্ত জরুরী।

সময় জার্নাল: অধ্যয়নরত অবস্থায় কেউ কি এই পেশায় যুক্ত হতে পারে?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : হ্যাঁ , সে সুযোগ আছে। প্রোগ্রাম চ্যানেলগুলোতে ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অনেক সুযোগ থাকে। তবে নিউজ চ্যানেলগুলোতে যেহেতু শুধু প্রেজেন্টার না বরং ফুল টাইম ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট নেয়ার আগ্রহ বেশি তাই সেখানে স্নাতক ডিগ্রি অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়।  

সময় জার্নাল: সংবাদ উপস্থাপনা পেশায় যুক্ত হবার  ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়া বাধ্যতামূলক কি না?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : না, যে কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই এই সেক্টরে আসা যায়।

সময় জার্নাল: আড্ডার মাঝে কোর্সের কথা বলছিলেন। কি ধরনের কোর্স করতে হয়, কোর্স করা কি বাধ্যতামূলক?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : নাহ, কোর্স করা বাধ্যতামূলক না। তবে চ্যানেলগুলো এখন চায় প্রিপেয়ার্ড ক্যান্ডিডেট। তাই যখন সিভি বাছাই করে, তারা দেখে কারা এই বিষয়ে শিখে এসেছে, তাদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। আর বর্তমানে চ্যানেল গুলোতে কাউকে শিখিয়ে নেয়ার সময় সুযোগটা খুব কম থাকে, তাই কোর্স করা থাকলে অডিশনে ডাক পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সময় জার্নাল: অনেকেই জানতে চান অন্য পেশার পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপনা করা যাবে কি না?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : হ্যাঁ, এই সেক্টরে অনেক প্রেজেন্টার আছেন যারা অন্য জব বা বিজনেসের পাশাপাশি নিউজ প্রেজেন্টেশন পেশাতেও পার্ট টাইমার হিসেবে যুক্ত আছেন।

সময় জার্নাল: তাহলে কেউ যদি পূর্ণকালীন বা ফুল টাইম সংবাদ উপস্থাপক হতে চায় তার সুযোগ কতটুকু?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : হ্যাঁ, নিউজ চ্যানেল গুলো থাকার কারণে ফুল টাইমারদেরও অনেক সুযোগ। তবে অন্য সেক্টরের মত এ পেশায় ভবিষ্যত আর্থিক অগ্রগতি, চাকুরীর নিরাপত্তা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা তুলনামূলক কম। তাই বেশিরভাগ সময়ই হতাশায় পড়তে হয়। তবে যারা মেধা, প্রচেষ্টার সাথে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একই সাথে নিউজ প্রেজেন্টেশন, স্পোর্টস প্রেজেন্টেশন, কমেন্ট্রি, টক শো ইত্যাদিতে যুক্ত আছেন তারা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

সময় জার্নাল: ৪টি চ্যানেলের সাথে যুক্ত ছিলেন।নিউজ চ্যানেলেও ছিলেন। নিউজ না প্রোগ্রাম, কোন চ্যানেলে বেশি উপভোগ করেছেন?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : সত্যি বলতে নিউজ চ্যানেলের প্রতিটা মুহূর্তই চ্যালেঞ্জিং। নিত্যনতুন স্ক্রিপ্ট আসতে থাকে, রিপোর্টার লাইভে যুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সেই সাথে স্পোর্টস- বিজনেস-ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন বুলেটিন থাকে। তাই নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হয় সব ভাবে। তাই নিউজ চ্যানেলের চ্যালেঞ্জটা বেশি উপভোগ করেছি।

সময় জার্নাল: সামনেই ঈদ, ঈদের সময়টা কিভাবে কাটান?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : আসলে আপনি জানেন গণমাধ্যমকর্মীদের ছুটি সেভাবে থাকেনা। প্রায় প্রতি ঈদেই নিউজ থাকে। এবারো আছে। বেশিরভাগ সময় স্টেশনেই কাটানো হয়। আর স্টেশন আমাদের আরেক পরিবার, তাই বেশিরভাগ সময় সেখানেই কাটে।

সময় জার্নাল: পরিবারের সাথে সময় দেওয়া হয় কতটা? কে কে আছে পরিবারে?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : মিলিয়ে নিতে হয় সময়। কম সময় দিলেও চেষ্টা করি নিজেদের মধ্যে ভালো সময় কাটানোর জন্য।পরিবারে বাবা-মা, সহধর্মিণী আর আমার ভাইরা আছে। এইতো সবার সাথে যতটুকু পারি সময়টা উপভোগ করি।

সময় জার্নাল: অনেক কথা হলো শেষ একটা প্রশ্ন- এখন তো পরিবর্তনের যুগ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রভাব কতটা পড়তে পারে এ পেশায় আপনার কি ধারনা?

মাহমুদুল হাসান জাহিদ : হা হা... খুব মজার প্রশ্ন আর সময়োপযোগী। এআই যখন প্রথম এলো তখন মনে হয়েছে এআই তো মানুষের মত অনুভূতি দিতে পারবেনা, কিন্তু এখন একটু ভয় করছে। কারণ এআইকে এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেই ক্যারেক্টারগুলোও খুব ভালো ইমোশন, এক্সপ্রেশন বিল্ড করছে। কে জানে হয়তো ৫ বছর পর এআই প্রেজেন্টারই খবর পড়বে!!! হা হা হা..।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল