বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

বর্ষায় কদমের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে—গ্রামবাংলা কি ভুলে যাচ্ছে ঋতুর দূতকে?

মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
বর্ষায় কদমের গন্ধ হারিয়ে যাচ্ছে—গ্রামবাংলা কি ভুলে যাচ্ছে ঋতুর দূতকে?

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’- বাংলা কবিতার মতো এভাবেই বৃষ্টিস্নাত সজীবতার রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে বর্ষা। রূপময় ঋতু বর্ষার যেন মেঘবতী জলের দিন। ষড়ঋতুর এ দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষা ঋতু। গোপালগঞ্জে কদম ফুলে বর্ষার পূর্ণতা পেয়েছে। এখানে গ্রাম কিংবা শহরের সর্বত্রই বর্ষার আগমনীতে নিজেদের মেলে ধরে আপন মহিমায় কদম ফুল। বর্তমান প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা বর্ষার স্মারক কদম ফুল।

কদম গাছ এখন আর তেমন আগের মতো চোখে পড়ে না। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না, যে কদমকে নিয়ে এত কিছু আষাঢ়ের বার্তাবাহক সেই প্রিয় ফুলের গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। কদম এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম। কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ এখন শহুরে লোকের কমই আছে। শুধু শহর নয় গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে কদম। কদম ফুলকে বলা হয়ে থাকে বর্ষার বিশ্বস্ত দূত। কাঠফাটা রোদে মানুষের হাঁসফাঁস করা গরমে অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণের জন্য প্রতীক্ষা বাসা বাঁধছে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের উপস্থিতি। বর্ষা মানে কদম ফুলের মতোই তুলতুলে নরম বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের ধ্বনি।

বিশিষ্ট প্রবীন কবি ও সাংবাদিক রবিন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, মূলত কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো যা বিরহীকে দুঃখী করে। বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি এসবও কদম ফুলের নাম। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধাকৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। গীতাতেও আছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।

ডাক্তার অমৃত লাল বিশ্বাস বলেন, কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়ে থাকে।

জেলা কালচারাল অফিসার ফারহার কবীর সিফাত বলেন, কদম ছাড়া বর্ষা বেমানান। বর্ষায় প্রকৃতির সতেজ-সজীব রূপ-রস যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয় জয় করে এসেছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশীয় গাছগাছালি ও ফলমূল আগের মতো পাওয়া যায় না।

লাভের অঙ্কের হিসাব মিলানোর জন্য মানুষ আর তার বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাচ্ছে না। ‘কদম’ গাছের জায়গায় এখন তারা মেহগনি, রেইনট্রিসহ নানা দামি দামি কাঠের গাছ রোপণ করছেন। পরিবেশ বিপর্যয়ের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি সামাজিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল