জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজনীতিতে বরাবরই আলোচনায় থাকে কুড়িগ্রাম-২ আসন। ফুলবাড়ী, রাজারহাট এবং কুড়িগ্রাম সদর নিয়ে গঠিত এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি শক্ত অবস্থানে থাকলেও, বিএনপি এবার নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে।
১৯৮০-এর দশক থেকে জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি পনির উদ্দিন আহমেদ বড় ব্যবধানে পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হামিদুল হকের কাছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ফলাফল স্পষ্ট করেছে যে দীর্ঘদিনের একক আধিপত্য আর অটুট নেই জাতীয় পার্টির।
বড় দল হিসেবে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা বিএনপি। এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সোহেল হোসেন কায়কোবাদ। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এ নেতা দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় এবং জেলা বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা ও কর্মীবান্ধব চরিত্রের কারণে তিনি সংগঠনের ভেতরে ইতিমধ্যে প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও তিনি গ্রাম থেকে পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত তৃণমূল সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রাজনীতিতে সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদর উত্থান ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রদল সংগঠিত হয়ে তৃণমূলে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে জেলা যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ধাপে ধাপে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের যোগ্যতা তাঁকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিবের আসনে পৌঁছে দেয়।
রাজনৈতিক জীবনে বারবার মামলা, হামলা ও কারাভোগ সত্ত্বেও সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ কর্মীদের ছেড়ে যাননি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তিনি সরাসরি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে তাঁর প্রতি তৃণমূলের আস্থা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি এখন “কুড়িগ্রাম বিএনপির আস্থার প্রতীক”।
কুড়িগ্রাম-২ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তিনি শীর্ষে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যদি বিএনপি তাঁকে প্রার্থী করে, তবে এ আসনে জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ তিনি শুধু সংগঠনের ভেতরই নয়, সাধারণ ভোটারদের মাঝেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।
জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের অব্যাহতি দিয়ে নতুন কমিটি গঠন, তরুণদের নেতৃত্বে এগিয়ে আনা এবং গ্রাম পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এর ফলে দীর্ঘদিন দুর্বল হয়ে থাকা জেলা বিএনপি ধীরে ধীরে আবারও শক্তি ফিরে পাচ্ছে।
রাজনীতিতে সৎ ও নীতিনিষ্ঠ মানুষ হিসেবে কায়কোবাদ পরিচিত। তাঁর বক্তব্যে বরাবরই পাওয়া যায় বাস্তবধর্মী প্রতিশ্রুতি। তিনি মনে করেন, রাজনীতিতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কোনো স্থান নেই; জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হলে কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে। এজন্য তিনি পকেটভিত্তিক বা স্বার্থান্বেষী রাজনীতিকে বর্জন করেছেন।
সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী এবং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছেন। তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য কেবল আসন দখল নয়; বরং কুড়িগ্রামকে একটি উন্নত জেলার রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলা।
স্থানীয় জনগণ আশা করছেন, যদি তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ ও কর্মসংস্থান খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন। বিশেষ করে, বন্যা ও নদীভাঙনকবলিত কুড়িগ্রামবাসীর জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ, কৃষি আধুনিকায়ন, তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাসকে তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
তাঁর সহজ-সরল ব্যক্তিত্ব, জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এবং দীর্ঘ তৃণমূল অভিজ্ঞতা তাঁকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। অনেকে মনে করছেন, “দল যদি সঠিক প্রার্থী দিতে পারে, তবে বিএনপি কুড়িগ্রাম-২ আসনে আবারও জয়ের স্বাদ পাবে”—এবং সেই সঠিক প্রার্থী হিসেবে তাঁরা কায়কোবাদকেই দেখছেন।
রাজনৈতিক সততা, সাংগঠনিক দৃঢ়তা এবং জনগণের আস্থা—এই তিন গুণের সমন্বয়ে আলহাজ্ব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে নেতৃত্বের এ দীর্ঘ যাত্রা তাঁকে এখন জাতীয় নির্বাচনে আলোচনার শীর্ষ প্রার্থী করেছে। তাই বলা যায়, আগামী নির্বাচনে তিনি বিএনপির জন্য হয়ে উঠতে পারেন “জয়ের হাতিয়ার”।
এমআই