নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায় ১১ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হওয়ায় আশেপাশের এলাকায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার এবং অসুস্থ গবাদিপশু জবাই করা থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, অ্যানথ্রাক্স একটি মারাত্মক প্রাণিবাহিত (জুনোটিক) রোগ, যা বাংলাদেশে মানুষ ও পশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে।
অ্যানথ্রাক্স মূলত তৃণভোজী প্রাণীর রোগ। এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর প্রায়ই প্রাণহানি হয়। এই রোগে আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসা, দূষিত চামড়া, হাড় বা পশম নাড়াচাড়া করা, কাঁচা বা পুরোপুরি রান্না না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এ রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ প্রকাশের সময়কাল (ইনকিউবেশন পিরিয়ড) ১ থেকে ২০ দিন। যদিও মানুষের মধ্যে এর সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম, তবে দেরিতে রোগ নির্ণয় হলে তা মারাত্মক হতে পারে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আহমেদ নওশের আলম বলেন, 'অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই করলে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। সবার প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো, অসুস্থ পশু জবাই করবেন না এবং সেগুলোর সংস্পর্শে আসবেন না। এটা ভয়ের নয়, বরং সতর্কতার বিষয়। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।।'
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা ড. এম. মুশতাক হোসেনও বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স থেকে নিরাপদ থাকতে হলে অসুস্থ গরু, ছাগল বা অন্য কোনো গবাদিপশু জবাই করা যাবে না। তাদের চিকিৎসা করাতে হবে; মারা গেলে মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মৃত পশুকে খাল বা জলাশয়ে ফেলা যাবে না।'
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, অনেকটা ক্ষতের মতো দেখতে গোলাকার ফুসকুড়ি, কখনও কখনও চুলকানি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিবায়োটিক ও লোশনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা পাওয়া যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা ভয়ের চেয়ে সতর্কতার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন।
আইইডিসিআর জানিয়েছে, রংপুরে এবারই প্রথম অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলো। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বর্তমানে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে পশুদের টিকা দিচ্ছে।
আইইডিসিআরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স এন্ডেমিক রোগ। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছরই বিক্ষিপ্তভাবে এর প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়।
আগের প্রাদুর্ভাবের তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে আইইডিসিআর পাঁচ জেলার—সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী—নয়টি উপজেলায় সক্রিয় অ্যানথ্রাক্স নজরদারি কার্যক্রম শুরু করে।
এমআই