শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

আসুন টেবিল সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করি!

মঙ্গলবার, জুলাই ২০, ২০২১
আসুন টেবিল সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করি!

হানজালা শিহাব :

মাঠের সাংবাদিকতায় অনেক বিপদ। শ্রম বেশি। খরচ আছে। মার খাওয়ার ভয়ও থাকে। শুধু কি তাই? না। বরং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামি হয়ে স্ত্রী, সন্তান আর স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারাগারে থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এমনকি আপনার প্রতিষ্ঠান আপনাকে চাকরিচ্যুতও করতে পারে মাঠের সাংবাদিকতার ‘অপরাধে’। কাজেই এই ঝুঁকি নেয়ার কী দরকার? এর চেয়ে বিকল্প ও উত্তমপন্থা এখন উম্মুক্ত। টেবিল সাংবাদিকতা! তাহলে এতে মনোনিবেশ করাই কি বুদ্ধি মানের কাজ নয়?

আপনি আমার সাথে দ্বিমত করতে পারেন। তবে উচ্চফলনশীল সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতার যুগে এখন সেটাই চলছে হরদম।

অনেকের আবার টেবিল সাংবাদিকতার ব্যাখ্যা, গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, সময়োপগিতা এবং এর সুফল ইত্যাদি নিয়ে কৌতূহল থাকতে পারে। চলুন, এসব বিষয়ে সাম্যক ধারণা নেয়া যাক-

সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো বিষয় ভাইরাল হলে তা নিয়ে টেবিল-চেয়ারে বসেই নিউজ করা যায়। আরো ১০টি হাউজ যখন এসব নিয়ে নিউজ করে তখন আপনার-আমার করাতেও দোষ নেই। একইভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সব বিটেরই এখন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ আছে। একজন একটা প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখে গ্রুপে দিলে গ্রুপের অন্যরা নিজস্ব সংবাদদাতা যোগ করে নিজের প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারেন। এরপর সেটা ছাপানো কিংবা আপ করা সবই সম্ভব এক টেবিলে বসেই। তাছাড়া তথ্য বিবরণী তো থাকেই প্রায় প্রতিদিন। সরকারও চায়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা। আমরাও তা লিড নিউজ হিসেবে চালিয়ে দিতে পারি প্রতিদিন। এতে দুই লাভ। সরকার খুশি হলো। আমিও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় অংশগ্রহণ করতে পারলাম টেবিলে বসে। এসব ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি থাকে না। অবশ্য গ্রুপের প্রেস বিজ্ঞপ্তি কখনো কারো পক্ষে-বিপক্ষে হতে পারে। এক্ষেত্রে একটু সাবধানী হলেই আপনি সফল সাংবাদিক। এছাড়া কপি-পেস্টের সাংবাদিকতা তো সবারই জানা। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা।

গণমাধ্যম আসলে কী?

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। তবে আমি কোনো জ্ঞান দিতে চাচ্ছি না। সাংবাদিকতার একযুগে দেখা আর শোনা কিছু কথা শুধু শেয়ার করতে চাই-

১. ২০১৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে একটি অনলাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্যার। বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঢাবির সাংবাদিকতার এই স্যার বলেছিলেন, ‘গণমাধ্যম বলতে আমরা বুঝি, যেটি গণমানুষের কথা বলে। কিন্তু দেশে এমন গণমাধ্যম কয়টি আছে? আমরা দেখি গণমাধ্যমের নামে ব্যক্তিমাধ্যম, রাজনৈতিকমাধ্যম কিংবা ব্যবসায়ীমাধ্যম। এগুলোকে আসলে গণমাধ্যম বলা যায় না।’

২. তথা কথিত একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকের বক্তব্য হচ্ছে এমন, ‘আমি পত্রিকা ছাপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। আমার পত্রিকা আমি পড়ি আর প্রধানমন্ত্রী পড়েন। আর কেউ পড়লে না পড়লে আমার কিছু যায় আসে না।’

৩. অর্ধযুগ আগের কথা। সাংবাদিকদের পদ-মর্যাদার ব্যাখ্যায় পেশার একজন নবীনের বক্তব্য ছিল ঠিক এমন, ‘বহু আগে রাজা-বাদশাসহ ধনাঢ্য বক্তিরা নিজেদের, সিংহাসনের, বাড়িঘরের ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাহারাদারির জন্য নিরাপত্তাকর্মী রাখতেন। একটা সময় দেখা গেলো, নিরাপত্তাকর্মী বা বডিগার্ডরা বিশ্বাসঘাতকতা করে। এরপর তাদের নিরাপত্তায় যুক্ত হলো অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী, কুকুর। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে দেখা গেলো, নিরাপত্তাকর্মী আর কুকুর দিয়েও সব টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সুরতাং এই তালিকায় যোগ হয়েছে সংবাদমাধ্যম আর সাংবাদিক।’

আমি সাংবাদিকতার ছাত্র নই। কাজ করতে করতে একযুগে সাংবাদিকতা যতকুটু শিখেছি, তাতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই উচ্চফলনশীল পেশায় টিকে থাকা বেশ কঠিন। সরকারি চাকরির মতো এখানেও বিভিন্ন জোর থাকতে হয়। একইসাথে তৈল শাস্ত্রের ব্যবহার বিধি ভালো আয়ত্তে থাকতে হবে। নয়তো টেবিল সাংবাদিকতার যুগেও আপনার জন্য পেশায় টিকা থাকা অসম্ভব।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল