নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজার দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভূমধ্যসাগর হয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বিশ্বের ১৪৪ বিশিষ্টজনের সঙ্গে আটক বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম কারামুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন। শনিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন তাঁর সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা।
ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তির পর শুক্রবার দুপুরে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। পরে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা করেন।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে ভোর ৫টার পর তিনি বের হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজ বহরে তাঁর যাত্রার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘গাজার মানুষ এখনও আক্রান্ত। এখনও তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ না হয়, আমাদের কাজ শেষ হয়নি।’
তিনি বলেন, আমি অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানাবো। বাংলাদেশি যারা সারা পৃথিবী থেকে সাড়া দিয়েছে, দোয়া করেছে, ভালোবাসা পাঠিয়েছে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের জাহাজবহরের সবচেয়ে বড় নৌযান দ্য কনশায়েন্সে ছিলেন শহিদুল আলম। তাঁর সঙ্গে ওই বহরের আরও ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিক, সমাজকর্মী, মানবাধিকারকর্মী আটক হন। এরই মধ্যে কয়েকজনকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন অস্ট্রেলীয় নারী মেডেলেইন হাবিবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরায়েলের মরুভূমির কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট) শহিদুল আলমকে বহনকারী ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান। পরে ইস্তাম্বুলের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম স্বাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নাগরিক অধিকার নিয়েও সোচ্চার তিনি। গাজা অভিমুখী একটি নৌবহরে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হন। ইসরায়েলের নৃশংসতা বন্ধ ও গাজায় নৌ অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজামুখী নৌযাত্রায় তিনি অংশ নেন।
ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে আত্মপ্রকাশ করা আরেক উদ্যোগ ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’র আটটি নৌযানও এ যাত্রায় অংশ নেয়। ৯টি নৌযানের এ বহরে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও অধিকারকর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।
বুধবার ওই নৌবহরে আক্রমণ করে সব অধিকারকর্মী ও নাবিককে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা। পরে শহিদুল আলমসহ আটক অনেককে ইসরায়েলের মরুভূমির কুখ্যাত কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়। ইসরায়েলে আটক হওয়ার পর থেকেই শহিদুল আলমের মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছিল।
শহিদুল আলমের মুক্তি ও ইসরায়েল থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তনে সাহায্য করার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
একে