বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

শরফুলের প্রকৌশলী থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে ওঠার গল্প

বুধবার, অক্টোবর ২২, ২০২৫
শরফুলের প্রকৌশলী থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে ওঠার গল্প

আবুল খায়ের:

জয়পুরহাটের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এক অদম্য তরুণ, যার হাতে নেই কোনো অত্যাধুনিক কম্পিউটার বা গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার। আছে কেবল একটি সাধারণ স্মার্টফোন, আর অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তি। সেই স্মার্টফোনকেই ক্যানভাস বানিয়ে তিনি আজ হয়ে উঠেছেন এক সফল গ্রাফিক্স ডিজাইনার। বলছি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শরফুল আমিনের কথা। স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বড় ইভেন্টের গ্রাফিক্স ডিজাইন, এমনকি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন, মেধা আর একাগ্রতা থাকলে কোনো বাধাই স্বপ্নের পথে অন্তরায় হতে পারে না।

গল্পের শুরু: স্বেচ্ছাসেবক থেকে সৃজনশীলতার পথে
সালটা ছিল ২০১৮। পাঁচবিবির ‘আস্থা সমাজ কল্যাণ সংস্থা’-র প্রচার সম্পাদক হিসেবে শরফুলের পথচলা শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই তার মনে মানুষের জন্য কিছু করার এক তীব্র আগ্রহ ছিল। এই সংগঠনই তাকে সেই সুযোগ করে দেয়। স্বেচ্ছাসেবার কাজ করতে গিয়ে তিনি কেবল দায়িত্ববোধই শেখেননি, বরং অন্যের জন্য কিছু করার আনন্দ এবং নেতৃত্ব দেওয়ার প্রথম পাঠ পেয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা তার সৃজনশীলতার ভিত্তি স্থাপন করে।

২০২৩ সালে যখন তিনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন, তখন তার লক্ষ্য ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়া। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সাদেকুল খন্দকার সেতুর সঙ্গে পরিচয় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্লাবের নতুন কমিটি গঠিত হয় এবং শরফুল প্রথম সেমিস্টারে মিডিয়া সেক্রেটারির দায়িত্ব পান।

ক্লাবের ব্যানার ও পোস্টার ডিজাইন করতে গিয়ে তার কাজ নজরে আসে সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুকের। শরফুলের ভাষায়, স্যারের অবদান তার জীবনে অতুলনীয়। তিনি কেবল ডিজাইন শেখাননি, বরং তার ভেতরের সুপ্ত সৃজনশীল ক্ষমতাকে খুঁজে বের করার সুযোগ দিয়েছেন। তার নির্দেশনায়, শরফুল স্মার্টফোনভিত্তিক প্রফেশনাল গ্রাফিক সফটওয়্যার 'পিক্সেল ল্যাব' ব্যবহার করে সীরাত কনফারেন্স, কাওয়ালী সন্ধ্যা, পুরকৌশল ভোজন বিলাস এবং বাংলা নববর্ষ উদযাপন-এর মতো বড় ইভেন্টের সব গ্রাফিক্স ডিজাইন করেন। 

প্রতিযোগিতার মাঠে অদম্য বিজয়
শরফুলের সৃজনশীলতা শুধু ডিজাইনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০২৪ সালে তিনি ডিআইইউ সিএসই স্প্রিং ফেস্ট-এর ফোটগ্রাফি এক্সিভভিশন-এ চ্যাম্পিয়ন হন। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি অংশ নেন ডুয়েট সিভিলাইজেশন ২০২৪ সিনেবাজ সেগমেন্টে “অ্যাওয়ারনেস এন্ড প্রিভেনশন অফ এক্সিডেন্টস ইন ইঞ্জিনিয়ারিং” শিরোনামে তার লেখা স্ক্রিপ্টে নির্মিত একটি শর্ট ভিডিওতে তিনি ও তার দুই সহপাঠী আনিসুর রহমান ও আসাদুজ্জামান আরিফ ৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হন। এই বিজয় প্রমাণ করে, তিনি কেবল একজন ডিজাইনার নন, বরং একজন দক্ষ নির্মাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা।

চ্যালেঞ্জ যখন নতুন পথের দিশা
২০২৫ সালে জুলাই গণভুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সীরাত কনফারেন্সের ডিজাইন নিয়ে তিনি এক অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। যিনি ডিজাইন করছিলেন, তিনি ফাইল দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এদিকে রাত পেরোলেই অনুষ্ঠান। তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রাকিব স্যারের অনুরোধে ডিজাইনের দায়িত্ব এসে পড়ে শরফুলের কাঁধে। ‘পপুলার ডিজাইন এন্ড গ্রাফিক্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা সোলাইমান ভাইয়ের পাশে বসে তিনি মোবাইল ফোন দিয়েই মাত্র ৪০-৪৫ মিনিটে একটি দুর্দান্ত ডিজাইন তৈরি করে দেন। তার এমন দক্ষতা দেখে সোলাইমান ভাই বিস্মিত হন এবং তাকে কাজ শেখার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, ২৭ ফেব্রুয়ারি শরফুলের ল্যাপটপ ও ফোন চুরি হয়ে যায়। প্রায় এক লক্ষ টাকার এই ক্ষতি তার পড়াশোনা ও ডিজাইন ক্যারিয়ারের প্রধান ভরসা কেড়ে নেয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও গাইডটিচার জাবের পাটোয়ারী স্যারের সাহস ও অনুপ্রেরণায় তিনি আবার ঘুরে দাঁড়ান। পরে তিনি সোলাইমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং ‘পপুলার ডিজাইন এন্ড গ্রাফিক্স’-এ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

স্বপ্ন থেকে বাস্তবতার পথে
আজ শরফুল উপলব্ধি করেন, ডিজাইন তার কাছে কেবল একটি দক্ষতা নয়; এটি তার স্বপ্নের ভাষা, আত্মপ্রকাশের মাধ্যম এবং টিকে থাকার লড়াইয়ের অস্ত্র। বর্তমানে তিনি ডিআইইউ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব ও কালচারাল ক্লাবের ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার এবং ফ্লিম ও ফটোগ্রাফি ক্লাবের জয়েন্ট ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শরফুল এখন নিজের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে তিনি তরুণদের নিয়ে কাজ করবেন, বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবেন এবং ডিজাইন ও প্রিন্টিং সেক্টরে একটি নতুন ধারা তৈরি করবেন। শরফুল আমিনের এই পথচলা আমাদের শেখায়, সত্যিকারের ইচ্ছা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।

সময় জার্নাল/একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল