ইবতেশাম রহমান সায়নাভ, বেরোবি প্রতিনিধি:
দেশব্যাপী ডিজিটাল অংশগ্রহণ ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘সিভিকশিল্ড’ নামের একটি নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে জলবায়ু, মানবাধিকার ও উন্নয়নমূলক সংগঠন এরাইজ ফাউন্ডেশন। রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে দীর্ঘদিনের গবেষণা ও কমিউনিটির বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্মিত এই প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়।
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিভিকশিল্ড দেশের ডিজিটাল ন্যায়বিচার, নাগরিক ক্ষমতায়ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠ তুলে ধরায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
সিভিকশিল্ডের ওয়েবসাইটে প্রান্তিক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর গল্প, অডিও সাক্ষ্য, তথ্যভিত্তিক রিসোর্স, শেখার উপকরণ এবং নাগরিক অংশগ্রহণ ও ডিজিটাল অধিকারের নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে।
প্ল্যাটফর্মটি এমন একটি ডিজিটাল পরিসর তৈরি করতে চায়— যেখানে প্রত্যেক নাগরিক নিজেদের নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্ত মনে করবেন,
ব্যক্তিগতভাবে মত প্রকাশ করতে পারবেন, এবং ডিজিটাল জগতে সমান অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।।
সিভিকশিল্ডের মূল লক্ষ্য হলো—প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা ও গল্প সামনে আনা, ডিজিটাল গল্পচর্চা উৎসাহিত করা, নাগরিক অধিকার, দায়িত্ব ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।
নারী, যুবসমাজ, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও তৃণমূল অধিকারকর্মীদের জন্য এটি একটি অর্থবহ অংশগ্রহণমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
সিভিকশিল্ড টিমে রয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা—
সাইয়াদা তাসনিম (গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ),
নাজনীন মুসফিকা (প্রশিক্ষণ ও যুব সম্পৃক্ততা),
সুরমা আফরোজ মিলি (আইন ও অধিকার),
আহসান হাবিব (অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্য),
বিশাখা সাহা (কনটেন্ট ও মিডিয়া),
নাফিসা খুশি (অপারেশনস ও প্রশাসন),
অফসানা ইসলাম আর্ণিকা (ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টস)।
এ বিষয়ে বিশাখা সাহার জানান, “সিভিকশিল্ডের কনটেন্ট ও মিডিয়া শাখার দায়িত্বে থাকা বিশাখা সাহা বলেন—“এরাইজ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন বিগত ছয় বছর ধরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করছে। সিভিকশিল্ড সেই কাজের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নির্বাচনী অন্তর্ভুক্তি ও ইস্তেহার উপস্থাপন সহজ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী, হরিজন সম্প্রদায়, চা–শ্রমিকসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও এর আওতায় আনা হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বেরোবির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হাশেম নূর বাঁধন এরাইজ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে সংস্থাটি জলবায়ু, মানবাধিকার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছে।
সিভিকশিল্ড কর্মসূচির আওতায় চালু করা হয়েছে— AI-ভিত্তিক লিগ্যাল এইড সাপোর্ট, তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য AI চ্যাটবট, সিভিক লার্নিং হাব, গুজব ও ভুল তথ্য শনাক্তকরণ ব্যবস্থা, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং ও ফ্যাক্ট-চেকিং কার্যক্রম।
এছাড়া তরুণদের মতামত ও প্রত্যাশা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘ইয়ুথ ম্যানিফেস্টো’, যা ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণে তরুণদের দাবি তুলে ধরবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে সহজ ভাষায় প্রচারণা ও ইস্তেহার উপস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নিবন্ধিত যৌনকর্মী, হরিজন সম্প্রদায়, চা–শ্রমিকসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে এরাইজ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন।
এমআই