মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

সাম্যের গান গাই

সোমবার, মার্চ ৮, ২০২১
সাম্যের গান গাই

ফাতেমা রহমান রুমা :
আজ ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবস। সারা বিশ্বের নারীকূলকে অভিনন্দন ও বিনম্র শ্রদ্ধা। নারী দিবসের আজকের এই বিশেষ দিনে তাদের প্রতি রইলো ভালোবাসা। কারণ- একজন নারী যেমন স্ত্রী-কন্যা, তেমনি মা। নারীকে বলা হয় কঠিন ধৈর্যের প্রতীক। সমাজের আলোর বাতিঘর। একজন নারীর মধ্যে রয়েছে- প্রেম-ভালোবাসা, রয়েছে স্নেহ-মমতা। সেই নারীকে অবহেলা করে, পেছনে ফেলে রেখে কখনো একটি সুখী-সমৃদ্ধ জাতি অথবা রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না। নেপোলিয়নের প্রখ্যাত সেই উক্তি ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব।’

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তাঁর ‘নারী’ কবিতায় এমনটিই ঘোষণা করেছেন-
           ‘সাম্যের গান গাই,
            আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোন ভেদাভেদ নাই,      
                    বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর
                                  অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
            বিশ্বে যা কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
            অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’

বাঙালি লেখক, শিক্ষাবিদ, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াও অবহেলিত নারী সমাজকে সামনে আনার নিরন্তন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারে বড় হলেও পশ্চাৎপদ নারীদের সামনে আনতে হাজারো বাধা অতিক্রম নারী জাগরণের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। আজকের এই নারী দিবসে বিশেষভাবে স্মরণ করছি বাংলার সেই ময়ষী নারী বেগম রোকেয়াকে। নারী নেত্রী বেগম রোকেয়া নারীতান্ত্রিক কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিপক্ষে ছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন নারী ও পুরুষ উভয়ই যেন সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচেন। নারী-পুরুষকে একটি গাড়ির দুটি চাকার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। সেই আলোকেই নারীকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, নারীর পরাধীনতায় হয়েছিলেন সোচ্চার। 

বিশেজ্ঞরা মনে করেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণময় বিষয়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য বেশি পালন করতে হয়। 

যদিও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে তার উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়া হয় না। সমাজের কথিপয় পুরুষ নারীকে ভোগবাদী হিসেবে মনে করে পেছনে দাবিয়ে রাখতে চান। আলোর পথে, সম্ভাবনার পথে, নতুন দিগন্তের পথে তাদের ছুটে আসতে বাধা সৃষ্টি করেন। নানা কুসংস্কার আরও হীন মানসিকতায় অগ্রগামী নারী সমাজকে পশ্চাৎপদ রাখার চেষ্টায় থাকেন। যদিও বিশ্বব্যাপী হাজারো অসংগতির মধ্যেও পুরুষের পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছেন নারীরা। ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে এ পর্যন্ত যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সবখানেই নারীর সরব নেতৃত্ব রয়েছে। যদিও তাদের নেতৃত্বের পথটি কোনোকালেই সুগম ছিল না; তবু তারা কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে পিছিয়ে থাকেননি। বাংলাদেশ আজ নারী নেতৃত্বের রোল মডেল। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোতে নারী নেতৃত্বের জয়গান। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষকে পেছনে ফেলে যোগ্যতা আর অসীম দক্ষতায় নারী নজিরহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। জল-স্থল-আকাশ পথে নিয়ন্ত্রণেও এখন আরও নারীকে অযোগ্য মনে করা হচ্ছে না। নারী তার নিজ যোগ্যতায় সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করতে সক্ষম হচ্ছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীও তার অসীম যোগ্যতার বাস্তব প্রমাণ রাখছে। খুব দ্রুতই পরিবর্তন ঘটছে পৃথিবীর নেতৃত্ব আর কর্ম কৌশল। নারী সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই নিজেকে যোগ্য করে তুলছেন। সেইসব নারীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

বর্তমানে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায়ও বিশেষ অবদান রেখেছে নারী নেতৃত্ব। বিশ্বে যে দেশের নেতৃত্ব যত দক্ষ ও জোরালো ছিল, সেই দেশ তত সহজে মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই এগিয়ে রয়েছে নারী নেতৃত্বাধীন দেশশুলো। বাংলাদেশ, জার্মানি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও তাইওয়ানের মতো দেশগুলো করোনা মোকাবিলায় যে সফলতা দেখিয়েছে, তা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মহামারি মোকাবিলায় এই সফল নারী নেত্রীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন।

এই উপলব্ধি থেকে একটি নতুন ভবিষ্যৎ সৃষ্টির প্রত্যাশায় সারা দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নারী নেত্রীরা। তারা বলেছেন, নেতৃত্বের গুণে এগিয়ে যায় সমাজ। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের গুণে কুসংস্কার ও সামাজিক অনাচারকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে রাষ্ট্র। আর নেতৃত্ব বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সমাজে যিনি নেতৃত্ব দেবেন, তার প্রভাবিত করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তাকে বুদ্ধিমান, আত্মবিশ্বাসী, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন হতে হবে। দেশে-বিদেশে এই নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছর উদ্যাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২১। আন্তর্জাতিকভাবে এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হয়েছে ‘নারী নেতৃত্বের বিকাশ : সমতাপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার।’ আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে- ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব।’

পরিশেষে বলতে চাই, নারীর সাফল্যেও গল্প বড় থেকে আরও বড় হতে পুরুষের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। নারীর সার্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও কঠিন ভূমিকা পালন করতে হবে পুরুষকেই। বন্ধ করতে হবে নারীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা আর ঘৃণ্য অপরাধ ধর্ষণ। নারীকে স্বাধীনতাভাবে মুক্ত মনে বাইরে চলাচালের অবাধ সুযোগ নিশ্চিত করে দিতে হবে। তবেই নারী-পুরুষের সমতায় সমৃদ্ধির আলোতে উদ্ভাসিত হবে এই ধরণীর বুক। কেটে যাবে সমাজচিত্রের কুসংস্কারের আধাঁর। 
জয় হোক নারী সমাজের। বিশ্ব নারী দিবসে পুরুষদের প্রতি রইল ফুলেল শুভেচ্ছা। 

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, জার্মানবাংলা২৪ ডটকম।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল