ডঃ শোয়েব সাঈদ:
লেখাটির শুরুতেই নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা সহ জানাচ্ছি পরিবারের প্রতি গভীর শোক, সমবেদনা আর আহতদের প্রতি সমবেদনা।
জাপান, ভূমিকম্প প্রস্তুতিতে বৈশ্বিক আইকন। পেশাগত কাজে গত সপ্তাহে ছিলাম জাপানে, গত শনিবার টোকিওতে ছেলের সম্ভাব্য নতুন আবাসন এলাকা দেখতে গিয়েছিলাম। রাস্তায় চোখ পড়ল একটি সাইন বোর্ডের উপর, ভূমিকম্পের সময় উদ্ধারকারী যানবাহন আর এ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্যে সংরক্ষিত লেনের নির্দেশনা সম্বলিত।
জাপানের মত আজকাল বাংলাদেশে টুকটাক ঝাঁকুনি লেগেই আছে, অপেক্ষা আর আশংকা বড় কিছুর। কিন্তু জাপানের Protective এবং Curative অবকাঠামোর সাথে বাংলাদেশ তুলনাযোগ্য নয়। রিকটার স্কেলে ৬ মাত্রার নীচের ঝাঁকুনি জাপানে তেমন অনুভূতি না জাগালেও, আমাদের জন্যে খুবই বিপদজনক।
আজকে বাংলাদেশ তার মাটির নীচে ৫.৫ ম্যাগনিচ্যুদের ভূমিকম্পে ভীতিকর অবস্থা মোকাবিলা করছে। ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ মোকাবিলায় শান্ত থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বড় ধরণের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। ধারণা করা হচ্ছে ৬ থেকে ৭ মাত্রার বেশ কয়েকটি কম্পনের। ম্যাগ্নিচ্যুড ৬-৭ মাত্রাকে বলা হয় শক্তিশালী, ৭-৮ মাত্রাকে বলে মেজর, ৮-৯ কে বলে গ্রেট তার উপর হলে গ্রেটার। অর্থাৎ আমরা মেজর ভূমিকম্পের সম্ভাবনার মধ্যে আছি যার ফলে ঘটতে পারে লক্ষ লক্ষ প্রাণহানি।
বাংলাদেশ সবসময়ই ভূমিকম্পের শঙ্কা-বলয়ের ভেতরে ছিল। শত বছরের ব্যবধানে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভূমিকম্পের ফিরে আসার ইতিহাস তো আছেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ আর বিজ্ঞানীদের মাঝে বাংলাদেশকে নিয়ে উৎকণ্ঠা ক্রমাগতই বাড়ছে।
বাংলাদেশের অবস্থানটি বেশ কয়েকটি বিপদজনকভাবে সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের বলয়ের মধ্যেই রয়েছে। তাছাড়া দেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় কিছু স্থানীয় ফল্ট বা চ্যুতি থেকেও বিপদ আসতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে আমাদের অতি স্বল্প উচ্চতাও বিপদের আরেকটি বাড়তি কারণ।
শুধু কম্পনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নয়, ট্রেমার পরবর্তী স্যুনামি কিংবা অকস্মাৎ বন্যার ফলেও ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। সর্বত্র দুর্নীতির হাতছানি আর সেই হাতছানিতে ক্রমশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠা জবাবদিহিতাবিহীন আমাদের নিম্নমানের নির্মাণ-শিল্পের বদৌলতে ৭ মাত্রার একটি ঝাঁকুনিতে ঢাকা শহরটি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার কোন মৃত নগরীতে পরিণত হবার সমূহ আশংকা রয়েছে।
আড়াই কাঠার একটি প্লটের উপর ৬ তালা ফ্ল্যাট দাড়িয়ে যাচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভুমিকম্প প্রতিরোধের বিষয়টি মাথায় না রেখেই। শুধু পুরাতন ঢাকার পুরাতন স্থাপনাগুলো নয়, ফ্ল্যাট সংস্কৃতির এই যুগে ভূমিকম্প অপ্রতিরোধী এই ফ্ল্যাটসমূহও একেকটি মৃত্যু ফাঁদ।
২০১১ সালে ১১ই মার্চে প্রায় ৯ মাত্রার তহুকু ভুমিকম্পে টোকিওতে ঝাঁকুনি লেগেছিল প্রায় ৭ মাত্রায় এবং তাতেও মাল্টি-স্টোরিড বিল্ডিং ধ্বসে যাওয়ার বা নিহত হবার ঘটনা নেই। নির্মাণ শিল্পে ভূমিকম্প প্রতিরোধী প্রযুক্তি রক্ষাকবচ হিসেবে একটা পর্যায় পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকরী এমনকি বিরল শক্তিমাত্রার কম্পনেও (৯ মাত্রার) ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বেশ কার্যকরী। ভূমিকম্প প্রস্তুতিতে জাপানিরা যে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় এর প্রমাণ অনেকবারই দিতে হয়েছে ।
২০১১ সালের তহুকু ভূমিকম্পটি ছিল জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাত্রার আর বিশ্বে পঞ্চম। অতি দ্রুত ধেয়ে আসা স্যুনামিটাই ছিল ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ যাতে সমস্ত প্রস্তুতি অকার্যকর হয়ে পরে। স্যুনামিটা যদি ঘণ্টা খানেক সময় দিত, নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যেত। ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের দুর্ঘটনাটি সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের পর বাস্তবতাটা হচ্ছে ভুমিকম্পের আশংকার মধ্যেই বাংলাদেশীদের বসবাস করতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে মূল ক্ষয়ক্ষতিটা হবে স্থাপনা ধ্বসে। মর্মান্তিক এক পরিনতির আশঙ্কায় ভীতির সাথে বসবাসের চাইতে কঠিন সময়টাকে কঠিনতম দৃঢ়তায় মোকাবেলা করার প্রত্যয় নিয়ে প্রস্তুতি থাকা উচিত। আমাদের সমাজে দুর্নীতি, পরিকল্পনাহীনতা সবকিছুর জন্যেই মাশুল দিতে হয় আমজনতার।
মাশুলটা দিতে হবে ধরে নিয়েই যতটা সম্ভব একটা বিপদকালীন প্রস্তুতি থাকা উচিত। বিপদে শান্ত থাকা বোধহয় সবচেয়ে বড় শক্তি। অন্যের সাহায্যে এগিয়ে যাবার প্রথম শর্তটাই হচ্ছে নিজেকে বিপদমুক্ত রাখা। বিমানে নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশনায় জরুরী অবস্থায় লাইফ জ্যাকেটটি নিজে পরে অন্যকে সাহায্য কারার কথা বলা হয় এবং এটি আপদকালীন শৃংখলার অংশ যা জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বিপদটা কখন আসবে যেহেতু জানা নেই, তাই প্রত্যেক মানুষের মূল দায়িত্বটা হচ্ছে নিজের, পরিবারের আর সম্পদ রক্ষায় অগ্রিম প্রস্ততি নিয়ে রাখা। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভূমিকম্প হলে করণীয় সম্পর্কে ধারনা তৈরি করে সচেতন করে রাখা। কিছু বিষয়ে সবসময় দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
•প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, টর্চ লাইট সহ শুকনো খাবারের মজুদ সবসময় ঘরে রাখা।
•পরিবারের প্রাপ্ত-বয়স্ক সদস্যদের কিভাবে জরুরী প্রয়োজনে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বন্ধ করতে হয় শিখিয়ে রাখুন। কম্পনের সাথে সাথে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। মনে রাখবেন, ভুমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ ও গ্যাস থেকে আগুন লাগা।
•বইয়ের তাক, আলমারি ইত্যাদি দেয়ালের সাথে এমনভাবে আটকে রাখুন যাতে ঝাঁকুনিতে না পড়ে যায়। বাচ্চাদের পড়ার টেবিলের পাশে উচু বইয়ের তাক কিংবা অন্য কোন প্রকার তাকে ভারী জিনিস রাখবেন না যা বাচ্চাদের মাথায়/শরীরে পড়তে পারে।পড়ার টেবিলটি বেশ শক্ত ধরণের হওয়া উচিত যাতে কম্পন শুরু হলেই বাচ্চারা টেবিলের নীচে আশ্রয় নিতে পারে।
•খাবার টেবিল কিংবা বিছানার ক্ষেত্রেও একই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে উপর থেকে ভারী জিনিসপত্র মাথায় বা শরীরে না পড়ে।
•ফ্রিজ, টিভির মত দামী ইলেকট্রনিক্স, বড় আয়না, ওয়াল পেইন্টিং, দেয়াল ঘড়ি যাতে সহজে পড়তে না পারে তা নিশ্চিত করুন। স্কিড নিরোধক এপ্লায়েন্স ব্যবহার করে ফ্রিজের মত ভারী ইলেকট্রনিক্সের সুরক্ষা করা যেতে পারে।
•ভূমিকম্পের সময় বাসায় থাকলে শান্তভাবে ভেতরেই থাকুন। ট্রেমারের সময় দরজার ছিটখানী খুলতে বা লাগাতে যাবেন না। হাঁটু গেড়ে খাট, টেবিল বা ভারী আসবাবপত্রের আড়ালে/নীচে নিজেকে সুরক্ষিত করুন। যে অবজেক্টটি আপনাকে প্রটেক্ট করছে তা শক্ত করে ধরে রাখুন কম্পন না থামা পর্যন্ত। যদি আশ্রয় নেবার কিছু না পান, হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ঢেকে দেয়ালের ধার ঘেঁষে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন। কম্পন থেমে যাবার পর পরিস্থিতি বুঝে মাথা ও ঘাড় শক্ত কিছু দিয়ে ঢেকে সাবধানে মুভ করবেন।
•ভূমিকম্পের সময় শান্ত থাকুন এবং অন্যদের শান্ত থাকতে সাহায্য করুন। খালি পায়ে নয়, শক্ত জুতা পরে চলাফেরা করুন যাতে গ্লাস, মেটাল ইত্যাদির ইনজুরি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
•গ্যাস লিকেজ আছে কিনা নিশ্চিত না হয় পর্যন্ত ম্যাচ, মোমবাতি জ্বালাবেন না।
•যদি শপিং মলে থাকুন তবে কোন স্টোরে প্রবেশ করে জানালা বা তাক থেকে দূরে থাকুন।
•হুইল চেয়ারে থাকলে, চাকা লক করে হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
•বাইরে থাকলে, যথা সম্ভব খোলা জায়গায় অবস্থান করুন, স্থাপনা থেকে দূরে থাকুন, বেশী মানুষের ভিড়ে প্যানিকজনিত চাপাচাপি থেকে দূরে থাকুন।
•গাড়ীতে থাকলে রাস্তা ব্লক না করে একপাশে থেমে যান এবং ভেতরে থাকুন। ব্রিজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, বিল্ডিং, বিলবোর্ড, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন থেকে দূরে থাকুন। পেছন থেকে ছুটে আসা গাড়ী থেকে সজাগ থাকুন, রিয়ার মিররের উপর নজর রাখুন। ঝাঁকুনি থামলে দেখে-শোনে নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আবার অগ্রসর হবেন।
•বাসে থাকলে এবং কম্পনে বাস থেমে গেলে হটাত করে রাস্তায় নেমে পড়বেন না। মাথা ও ঘাড় ঢেকে বাসের ভেতরে থাকার চেষ্টা করুন।
•ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যবহার করবেন না। লিফটে থাকলে পরবর্তী তালার তাড়াতাড়ি নেমে পড়ুন।
•সমুদ্র বা নদীর ধারে থাকলে যথাশীগ্র উচু জায়গায় চলে যান।
•ভূমিকম্পের পর নিজের এবং পরিবারে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকুন। ঝুলন্ত, নড়বড়ে বা ভেঙ্গে পড়তে পারে এমন স্থাপনা থেকে দূরে থাকুন। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা স্যুয়ারেজ সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়ে ব্যবহার করবেন না।
•প্রতিবেশী বা অন্যের সাহায্যে এগিয়ে যাবেন অবশ্যই। কিন্তু মনে রাখবেন পেশাদার উদ্ধারকারীদের কাজে যাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়। আপনার অযথা অতিউৎসাহে বা জটলা পাকানোতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হতে পারে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া বিপদসংকুল উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। তাতে আপনার জীবন বিপন্ন হওয়া ছাড়াও সহজ কাজটি কঠিন হয়ে যেতে পারে।
•মানুষ মানুষের জন্যে। বিপদের সময় আপনার মনুষ্যত্ব যেন আপন মহিমায় আলো ছড়ায়। যা পাবেন নিজের জন্যে সব যোগাড় করার মানসিকতার চেয়ে সবার সাথে শেয়ার করুন। মনে রাখবেন সবচেয়ে বড় মানবপ্রেম বা দেশপ্রেম হচ্ছে বিপদের সময় নিজের চাহিদাকে যতটুকু সম্ভব সংকুচিত করে অন্যের সাহায্যে হাত বাড়ানো।
•বাচ্চাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পূর্ব প্রস্ততি থাকা অত্যাবশ্যক। জাপানি বাচ্চাদের প্লে গ্রুপ থেকেই ভূমিকম্পের ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করা হয়। প্রতিটি স্কুলে ইমারজেন্সি কিটস, শুকনো খাবার, পানির মজুদ থাকে। মাথাকে সুরক্ষা দেবার শক্ত হেট, হাতমোজা ইতাদির ব্যবস্থাও থাকে।
•বড় ধরণের ভুমিকম্প হলে অভিভাবক না আসা পর্যন্ত বা অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চারাদের স্কুল থেকে ছাড়া হয় না। জাপানের শহরগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় মাথায় শক্ত হেট পরে ভূমিকম্প প্রতিরোধ মহড়ায় শান্তভাবে অসংখ্য বাচ্চাদের অংশ নিতে। ভূমিকম্প বিষয়ে বাংলাদেশের স্কুলগুলোতে ঘন ঘন মহড়াসহ ন্যাশনাল একশন প্লান/পলিসি থাকা উচিত।
•রেডিও, টেলিভিশনকে ভূমিকম্প ওয়ার্নিং সিস্টেমের আওতায় আনতে হবে যাতে ভুমিকম্পের সাথে সাথেই স্বাভাবিক অনুষ্ঠানের বদলে ভূমিকম্পের সংবাদ প্রচার করতে পারে।
“বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়” – কবিগুরুর মত এতটা সাহসী না হয়ে বরং আমার প্রার্থনা দুটোতেইঃ বিপদ থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিপদে ভয় না পেয়ে সাহসের সাথে মোকাবিলা করার সক্ষমতার জন্যেও।
বড় ধরণের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতিকে কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলা মুশকিল, তবে প্রস্ততি থাকলে মোকাবিলা করতে সুবিধে হয়। জাতীয় পর্যায়ে লজিসটিক্যালি ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রনে আমাদের সক্ষমতা হয়তো খুবই অপ্রতুল, কিন্তু ব্যক্তিগত বা দলবদ্ধভাবে উপরের গাইড লাইনগুলো মেনে চললে প্রাণহানি বা আহত হবার ঘটনা অনেকখানিই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
লেখাটি শেষ করছি জাপানি ফেলো ফিলিংসের নিত্যনৈমিত্তিক কাহিনীর একটি দিয়ে। ২০১১ সালের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার একটি কনভেনিয়েন্স স্টোর বা দোকানে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে গ্রাহকগণ কিছু খাবার আর পানির জন্যে। এদের অনেকেই সদ্য হারিয়েছে বাড়িঘর, আত্মীয়-স্বজন।
দোকানটিতে বিদ্যুৎ নেই, ক্যাশ মেশিনটি অচল, দোকানদার ভদ্রলোক স্টক থেকে সব পণ্য বের করে আনছেন, ক্যাশের কোন খবরই রাখছেনা, রাখার প্রয়োজনও নেই, প্রাপ্য দামটি সবাই রেখে যাচ্ছে একটি বাটিতে। কোন হুরাহুরি নেই, যত পারি কিনে নেবার মানসিকতা নেই, সবাই লক্ষ্য রাখছে লাইনের শেষ লোকটিও যাতে কিছু পায়।
সমাজের শেকড় থেকে বেড়ে উঠা সততা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা আর ধৈর্যের এই নীরব প্রয়োগ হচ্ছে যে কোন জাতির জন্যে বিশেষ করে দুর্যোগের সময় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সম্পদ।
সততা আর সহনশীলতার প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানের পরও জাতি হিসেবে আমাদের সহমর্মিতার ইতিহাসকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই, কিন্তু ভূমিকম্পের মত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মাঝে সহমর্মিতার বিষয়টি হতে হবে আরও পরিপক্ক, রেজিমেন্টেড এবং দায়িত্বশীল।
লেখক: ডঃ শোয়েব সাঈদ, মন্ট্রিয়ল, কানাডা।