কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস
কলকাতার হয়ে ৩৬ বলে ৮৮ রান করেন আন্দ্রে রাসেল
চেন্নাইয়ের হয়ে ২৩ বলে ৫৬ রান স্যাম বিলিংসের
চেন্নাই থেকে আইপিএল সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ করেছে জনতাদুই বছর পর চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠে ফিরল আইপিএল। শহরটি কোথায় উৎসবে ভেসে যাবে, তা না চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের বাইরে হাজারো জনতার বিক্ষোভ! পোড়ানো হয়েছে ম্যাচের টিকিট থেকে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সি। কাবেরী নদীর জল ঠিকভাবে না পাওয়ায় ভোগান্তিতে রাজ্যের কৃষক, এই পরিস্থিতির মধ্যে আইপিএল তাঁদের কাছে ‘বিড়ম্বনা’ ছাড়া আর কিছুই না!
কিন্তু ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছে নির্ধারিত সূচি মেনেই। প্রায় চার হাজার পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনিতে চেন্নাইয়ের ‘দুর্গ’ খ্যাত চিদাম্বরম যেন আক্ষরিক অর্থেই নিরাপত্তা ব্যূহ হয়ে উঠেছিল। আর মাঠে তিন স্পিনার ও তিন পেসার দিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আটকানোর ফাঁদ পেতেছিলেন চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে কলকাতার ‘নাইট’ আন্দ্রে রাসেল সেই ফাঁদ ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেলেছেন ৩৬ বলে ৮৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। ক্যারিবীয় এই ঝড়কে পুঁজি করে কলকাতাও তুলে ফেলে ৬ উইকেটে ২০২ রানের পাহাড়।
চেন্নাইয়ের সেই পাহাড় টপকানোর লক্ষ্যকে শুরুতেই সহজ করে দেন দুই ওপেনার। ৫ ওভারের মধ্যে ৬৩ রান তুলে ম্যাচের সুর বেঁধে দেন শেন ওয়াটসন ও অম্বতি রাইড়ু। এরপর মাঝপথে চেন্নাইয়ের রানের গতি থেমে গেলেও স্যাম বিলিংসের ব্যাটে ভর করে জয়ের পথেই ছিল চেন্নাই। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে বিলিংস (৫৬) যখন আউট হন ৮ বলে ১৯ রান দরকার দলটির।টান টান উত্তেজনার এ ম্যাচে শেষ ওভারে ১৭ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। বিনয় কুমারের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন ডোয়াইন ব্রাভো। ফুল টস ডেলিভারি কোমরের ওপরে থাকায় বলটি ‘নো’ ছিল। পরের বলে ‘ফ্রি হিট’ পেয়ে ব্রাভো উড়িয়ে মেরে ক্যাচ দিলেও আউট হওয়ার বদলে ২ রান নেন। চাপে পরে এর পর ‘ওয়াইড’ ডেলিভারি দেন বিনয়। ২ বলে ৪ রান দরকার থাকতে ছক্কা মেরে চেন্নাইকে ৫ উইকেটের দুর্দান্ত জয় এনে দেন জাদেজা।
মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে তাঁদের মাঠে হারিয়ে এবার আইপিএলে শূভসূচনা করেছিল চেন্নাই। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দুই বছর পর আইপিএলে ফিরে ঘরের মাঠেও প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে শুরু করল ধোনির দল। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বাঁধা টপকালেও দ্বিতীয় ম্যাচে ধোনিদের দুর্গে এসে হারের মুখ দেখল দিনেশ কার্তিকের কলকাতা।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা কলকাতা দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার সুনীল নারাইনকে (১২) হারায়। মিডলঅর্ডার সেভাবে খেলতে না পারায় ১০ম ওভারের মধ্যেই ৫ উইকেট হারায় কলকাতা। তবে দলটির রানের চাকা ভালোই সচল (৮৯/৫) ছিল। রাসেল এই সচল রানের চাকাকেই ঘুরিয়েছেন ফর্মুলা ওয়ানের গতিতে! ড্যারেন ব্রাভোর করা ১৭তম ওভারেই মেরেছেন তিন ছক্কা। এর মধ্যে প্রথমটি পাঠিয়েছেন স্টেডিয়ামের বাইরে!১৯তম ওভারে ব্রাভোকে আবারও বোলিংয়ে এনে জুয়া খেলার মাশুল দেন চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি। এবার ব্রাভোর প্রথম তিন বলে রাসেলের তিন ছক্কা এবং দ্বিতীয় ছক্কাটি স্টেডিয়ামের ছাদে! মূলত রাসেলের তাণ্ডবেই শেষ ৫ ওভারে ৭৯ রান তুলেছে কলকাতা। ক্যারিবীয় এ অলরাউন্ডার নিজের প্রথম ১১ বলে ১০ রান করেছিলেন। কিন্তু শেষ ২৫ বলে করেছেন ৭৮ রান এবং তার মধ্যে শেষ ১৪ বলে মেরেছেন ৮ ছক্কা!
সব মিলিয়ে ১ চার আর ১১ ছক্কায় আইপিএলে সাত নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছেন রাসেল। চেন্নাইয়ের ইনিংসের শেষও করেছেন ছক্কা মেরে। যেহেতু অপরাজিত ছিলেন তাই বল থাকলে হয়তো সেঞ্চুরিটাও হয়ে যেত! ৩৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে চেন্নাইয়ের সফল বোলার ওয়াটসন।
সেই ওয়াটসনই আবার চেন্নাইয়ের ইনিংসে প্রথম ওভারেই ১৬ রান তুলে দারুণ শুরু করেছিলেন। ৫.৫ ওভারে আউট হওয়ার আগে রাইড়ুর সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৭৫ রান যোগ করেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ অলরাউন্ডার। ৩ ছক্কা ও ৩ চারে সাজিয়েছেন ১৯ বলে ৪২ রানের ইনিংসটি।ওয়াটসন আউট হওয়ার পর চেন্নাইয়ের রান তোলার গতিতে ভাটা পড়েছে। ৬ ওভার শেষে চেন্নাইয়ের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৭৫, কিন্তু পরের ২৪ বলে এসেছে আরও ১ উইকেট হারানোর বিনিময়ে এসেছে মাত্র ১৫ রান! অর্থাৎ ১০ ওভার শেষে তাঁদের স্কোর ২ উইকেটে ৯০। পায়ে ‘ক্রাম্প’ নিয়ে উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সুরেশ রায়না (১৪)। রাইড়ু (৩৯) ভালো শুরু করলেও দলের প্রয়োজনের সময় হাত খুলতে ব্যর্থ।
কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ৩০ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়ে লড়াইয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক ধোনি ও স্যাম বিলিংস। জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ৫৮ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। হাতে ৭ উইকেট। ১৬তম ওভারে নারাইন মাত্র ৭ রান দেওয়ায় লক্ষ্যটা নেমে আসে ২৪ বলে ৫১ রানে। পরের ওভারে ধোনিকে (২৫) তুলে নেন কলকাতার স্পিনার পীযুষ চাওলা।