মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভীতি আর গুজবে করোনা পরীক্ষায় অনিহা!

গাংনীতে এক মাসে দুই গ্রামের ৪৪ জনের মৃত্যু, কবরস্থানে সারি সারি কবর

বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৯, ২০২১
গাংনীতে এক মাসে দুই গ্রামের ৪৪ জনের মৃত্যু, কবরস্থানে সারি সারি কবর

ওয়াজেদুল হক, মেহেরপুর প্রতিনিধি : গ্রামের কবরস্থানে গিয়ে দেখা মেলে সারি সারি নতুন কবর। এক সারিতে রয়েছে ২৪ জনের কবর। বাঁশের রেলিং দিয়ে ঘেরা কবরে সমাহিত হয়েছে গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ। মসজিদের মাইকে ঠকঠক শব্দ হলেই গ্রামের মানুষ কান খাড়া করে থাকে। এই বুঝি কারো মৃত্যু সংবাদ শোনানো হবে। শুনছেও তাই। এক জনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরার আগেই আরেকজনের মৃত্যুর খবর! গ্রামের ইতিহাসে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। তাই ভীতি ছড়িয়েছে পড়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে। তবুও করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ থাকা মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না। নানা ধরনের গুজব, ভীতি আর অনিহায় করোনা পরীক্ষা থেকে দূরে থাকছেন গ্রামের মানুষ। এতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানালেন কয়েকজন সচেতন মানুষ। এমন চিত্র মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের। একই উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে গেল এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। সেখানেও দেখা গেছে সারি সারি নতুন কবর। জেলার অনেক গ্রামের চিত্র এমন হলেও করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোড়পুকুরিয়া ও গাড়াডোব গ্রামে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে অনেকেই করোনা আক্রান্ত ছিল, কারো কারো করোনা উপসর্গযুক্ত ছিল, আবার কেউ কেউ বার্ধক্য ও দীর্ঘমেয়াদী রোগগ্রস্ত ছিল। তবে এর আগে কখনও অল্প সময়ে এত মানুষের মৃত্যু দেখেনি গ্রামবাসী। তবুও গ্রামের অনেক সংখ্যক মানুষ সর্দি, জ্বর ও করোনা অন্যান্য উপসর্গ নিয়েই চলাফেরা করছেন।
  
জোড়পুকুরিয়া গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, গেল এক মাসে যে ২৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এদের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। টেস্ট করার পর তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তবে অন্যরা কেউ করোনা পরীক্ষা করেননি। তবে তাদের মধ্যে করোনার উপসর্গ ছিল। পরীক্ষা করা গেলে হয়তো এদের বেশিরভাগেরই করোনা পজিটিভ পাওয়া যেতো। তারপরও গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও করোনা পরীক্ষার বিষয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিরত থাকছেন। এদিকে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মত একই চিত্র গাড়াডোব গ্রামের। গাড়াডোব গ্রামে মৃত্যুবরণকারী ২১ জনের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ১০ জন। বাঁকি যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের কারও করোনা টেস্ট করা হয়নি। 

জোড়পুকুরিয়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক লিটন হোসেন জানান, প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন মানুষ তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই করোনা উপসর্গ নিয়ে। জোর করেও এদেরকে করোনা পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জোড়পুকুরিয়া ও আশপাশের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এক-দুইজন করে মানুষের মাঝে করোনা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা করলে এদের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ ভাগ মানুষের করোনা পজিটিভ হবে। 

গাড়াডোব কমিউনিটি ক্লিনিকের সেকমো চিকিৎসক সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন সর্দি, কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা নিয়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মত রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে নির্দেশ দেওয়া হলেও অনেকে তা করাচ্ছেন না। একারণে পুরো গ্রামে করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য এলাকার চেয়ে এই গ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ধানখোলা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড গাড়াবোড গ্রাম। ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখের উজ্জামান ও ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, গ্রামজুড়ে ঘরে ঘরে সর্দি, জ্বর, কাশি। মৌসুমি অসুখ ভেবে অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আবার গ্রামে একঘরে হওয়ার ভয়েও অনেকে তথ্য গোপন করে রাখছেন। অনেকে স্থানীয় কবিরাজের কাছেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। যখনি শ্বাসকষ্ট শুরু হচ্ছে তখন হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। ফলে এখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক মাসে সেখানে ২১ জনের অধিক মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলেও তারা জানান। 

গ্রামে অবস্থানকালে এ গ্রামের বাসিন্দা পানছুরা খাতুন (৫০) একটি মুদি দোকানে তেল নিতে এসেছিলেন। তিনি জানান, তিনি ২০ দিন ধরে জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ছিলেন। জীবনে অনেকবার জ্বর সর্দি কাশিতে ভুগেছেন। তবে এবারের জ্বর এতটাই কষ্টদায়ক ছিল যে বিছানা থেকে উঠতে দেয়নি। শরীর একেবারে দুর্বল করে দিয়েছে। তার ছেলে সাইদ হোসেনও জ্বরে ভুগছে। জ্বর মাথাই নিয়েই ছেলেটি মাঠে পাট কাটতে গেছে।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, তিনি ও তার মেডিকেল টিম গাড়াডোব গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। প্রায় ঘরে ঘরে করোনা সংক্রমিত মানুষ রয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করবেন। একই সাথে গ্রামবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে প্রচারণা চালানো হবে। গ্রামটিতে গণ টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও জানান, তথ্য গোপন করায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার যেমন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তেমনি তার মাধ্যমে অন্য মানুষেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই ভয় ভীতি উপেক্ষা করে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়ার আহবান জানান তিনি। 

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গাংনী উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ৩০০ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলাতে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৪১৪ জন। 

সময় জার্নাল/এসএ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল