অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন :
খুব বিপদে আছি, এখন কী হবে আমাদের?
বাংলাদেশে কোভিড প্রতিরোধী ভ্যাক্সিনের বিরূদ্ধে একটা গোষ্ঠী শুরু থেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক নেতা বলেছিলেন, মরে গেলেও এই ভ্যাক্সিন তারা নেবেন না। যদিও পরবর্তীতে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে তারা অনেকেই টিকাও নিয়েছেন। ফেসবুকে এই নিয়ে অনেক ট্রলও হয়েছে। তবে টিকাবিরোধী অপপ্রচার সুকৌশলে এখনো চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা একজন ইউটিউবার ডাক্তারকে দেখলাম এই টিকা নিয়ে উদ্ভট কথা বলছে, যা শুনে যে কোন দুর্বল ঈমানের লোক এই ভ্যাক্সিন নেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
আমরা ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস এন্ড রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর) এর পক্ষ থেকে উক্ত ডাক্তারকে চিঠি দিয়ে তার ভিডিওর অসত্য তথ্য সরিয়ে নিতে বলেছি। এছাড়া তার প্রচারিত চিকিৎসাবিষয়ক অন্যান্য কিছু তথ্যের অসঙ্গতির ব্যাপারে আমারে তাকে চিঠিতে লিখেছি। তিনি ভ্যাক্সিনসংক্রান্ত ভিডিওটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নিয়েছেন এবং সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমরা আশা করি, অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যাবলীও তিনি অন্যান্য ভিডিও থেকে সরিয়ে নেবেন।
কিন্তু কাহিনী বাঁক নিয়েছে অন্যখানে। অসম্ভব নিম্নমানের ভাষায় গালাগালি দিয়ে অপরিচিত আইডি থেকে আমাদের মেসেজ করা হয়েছে। লন্ডনের একটি ফোননম্বর থেকে আমাদের যুগ্ম-মহাসচিবকে ফোন করে এফডিএসআর সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় কথা বলা হয়েছে এবং আমাদের নানাভাবে হুমকি প্রদান করা হয়েছে। আইনজীবী পরিচয় দিয়ে জনৈক ব্যক্তি এফডিএসআরের বিরূদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে।
এফডিএসআর পর্যাপ্ত খোঁজখবর এবং গবেষণা না করে সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে অবস্থান নেয় না। জনৈক ডাক্তারের অবৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই আমরা তাকে চিঠি দিয়েছি। আমরা আশা করি, তিনি প্রয়োজনীয় ত্রুটিগুলো শুধরে নেবেন। এটি তার সাথে এফডিএসআরের ব্যক্তিগত কোন বিষয় নয়। এর সাথে বাংলার মানুষের জনস্বাস্থ্যের বিষয় জড়িত। এখানে মানুষের সারল্য এবং ধর্মবিশ্বাসের মাধ্যমে চিকিৎসার নামে এক ধরণের প্রতারণা করা হচ্ছে, যার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এই চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে পিংক সল্ট বা সোজা বাংলায় লবন খাবার পরামর্শ দেন। ডাক্তারদের একাধিক ওষুধ লেখার তীব্র সমালোচনা করে নিজেই এক প্রেসক্রিপশনে সাত-আটটি ওষুধ লেখেন, যার মধ্যে চার-পাঁচটি থাকে বিভিন্ন পদের ভিটামিন ট্যাবলেট/ক্যাপসুল। এসব বাদ দিয়ে তিনি ভালো কাজ করলে তো কারো কোন আপত্তি থাকার কথা না। কাউকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে বলা, নিয়ম মেনে চলা, সুষম খাদ্য খাওয়ার মত পরামর্শ দিতে তো কেউ কোন ডাক্তারকে মানা করবে না। অনেক অসুখেই ওষুধের পাশাপাশি এগুলো চিকিৎসারই অংশ।
কিন্তু এর জন্য যারা ভাবছেন ফোন করে, গালাগালি করে কিংবা মামলার ভয় দেখিয়ে এফডিএসআরের মুখ বন্ধ করবেন, তারা সম্ভবত বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। সেইসব ফেইক আইডির বীরপুরুষদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাদের হুমকি-ধামকিতে আমরা খুব ভয় পাইছি ভাই।
এতটাই ভয় পাইছি যে বলতে ইচ্ছে করছে, ‘সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকাতে নেই’।
লেখক : চেয়ারম্যান, এফডিএসআর।