আশির আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, কিউস্যু ইউনিভিার্সিটি, জাপান :
ভদ্রলোক বিলিয়নিয়ার। সত্তোরোর্ধ বয়স। সাধাসিধা পোশাক। এসেছেন টোকিও থেকে। আমার সাথে এক বিকাল কাটাবেন। বাকি জীবনটুকুর পরিকল্পনা নিয়ে সিরিয়াস কিছু কথা শোনাবেন। ২ ঘণ্টা। উনি প্রস্তাব দিবেন। আমি প্রস্তাব দেব। তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম। রাতের বেলা খেতে খেতে আরো দুই ঘণ্টা কথা বলবেন। দুজনের জন্য বাড়ির কাজ থাকবে। এক রাত চিন্তা করা হবে। পরদিন সকালে সিদ্ধান্ত হবে।
রাতের খাবার খাবার জন্য সমুদ্রের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে বসলাম। রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার। খেতে খেতে জিজ্ঞাস করলাম- কীভাবে বিলিওনার হলেন। মিট মিট করে হাসলেন।
বললেন, উনি যখন স্কুলে পড়তেন, ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। পড়াশুনা ভাল্লাগতোনা। ফলাফল দেখলেন ওনার স্থান ২৪৯ তম।
২৫ বছর বয়সে ব্যবসা শুরু করলেন। ঘরে ঘরে নিজ হাতে দই বিলি করতেন। ভোর চারটায় বের হতেন। ৮ টার দিকে বিলি শেষ। তারপর শুরু করতেন মার্কেটিং। ডাইরেক্ট মার্কেটিং। ঘরে ঘরে দরজা নক করো। প্রোডাক্ট এর গুণাগুণ ব্যাখ্যা করো। যত বিক্রি তত আয়।
এখনকার লোকজন দরজা নক করলে দরজা খোলে না। হোম সিকিউরিটির ক্যামেরা দিয়ে দেখে নেয় কে নক করছে। অথবা ইন্টারকম দিয়েই "আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করেন" জাতীয় কথা বলে বিদায় করে দেন। ই-কমার্স শুরু হয়েছে। মার্কেটিং হয় ইন্টারনেটে।
আগেকার দিনে কোন রকমে দরজা খোলাতে পারলে উনি ওনার মার্কেটিং স্কিল ব্যবহার করে মাসিক দই কেনার কন্ট্রাক্ট নিয়ে নিতে পারতেন। ওনার মার্কেটিং স্কিল ছিল ইউনিক। সাথে স্যাম্পল দই নিয়ে ঘুরতেন। ওনার টার্গেট কাস্টোমার হলেন যে বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে সেই বাড়ি গুলো। কোন রকমে একটা স্যাম্পল দই বাচ্চাকে খাওয়াতে পারলেই বাবা মা কন্ট্রাক্টে রাজি হয়ে যেতেন। দই এর কোয়ালিটি ভালো ছিল। অনেকটা গ্রামীণ-ড্যানোন এর শক্তি দই এর মত।
কোন বাড়িতে বাচ্চা আছে, বুঝতেন কি করে?
-তখন মানুষ কাপড়চোপড় বাইরে শুকাতে দিতো। ওই কাপড় চোপর দেখেই আন্দাজ করতাম।
মার্কেটিং এর কৌশল দেখেন। কাস্টোমার কিভাবে আইডেন্টিফাই করতেন। ওনার মার্কেটিং স্কিল এর জন্য এই কোম্পানি ওই কোম্পানি ওনার সাথে যোগাযোগ শুরু করলেন। ব্যবসার জন্য ব্যবসা না। মানুষের কাজে লাগে, কেনার সামর্থ্য আছে এমন প্রোডাক্ট আর কাস্টমার সিলেক্ট করতেন। অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করতেন আর কমিশন নিতেন। সেই কমিশন নিতে নিতে এই ব্যবসা ওই ব্যবসা করতে করতে আজ বিলিওনার।
জাপানের উত্তরাঞ্চলে যেখানে শীতকাল না আসতেই বরফে ঢেকে যায়। ঘনবসতি ও হাল্কা। এমন অঞ্চলে ভোর ৪ টায় পায়ে হেঁটে হেঁটে মানুষ ঘুম থেকে ওঠার আগেই দই বিলিয়ে দিতেন। বিলাতে বিলাতে বিলিয়নিয়ার।
ইফোর্টস নেভার বিট্রে। পরিশ্রমীরা কখনো ঠকে না। সাফল্য আসবেই।