চার বছরের প্রস্তুতি, করোনার কারনে এক বছর পিছিয়ে অবশেষে দু সপ্তাহের আয়োজনে গত পরশু দারুন সফলতার সহিত শেষ হলো টোকিও অলিম্পিক ২০২০।
পেনডেমিক এর কারনে এবার অলিম্পিক এর বেশীরভাগ খেলাই ঘরে বসে পরিবারের সবাই কে নিয়ে উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে।
জাপান অলিম্পিক টিম তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৭টি গোল্ড পদক পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরই অবস্থান করছে।
এত এত গোল্ড পদক পেয়ে জাপানের প্রতিক্রিয়া কি, নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে! আমরাও জানতে মন চেয়েছিল। গত দু'দিন রাস্তাঘাট, শপিংমল কোথাও কোন উচ্ছ্বাস কিংবা লক্ষণীয় কিছু চোখে পড়ল না। একমাত্র ভরসা টিভি, গত দুদিনে অলিম্পিক যারা সফল তাদের সফলতার পেছনের ইতিহাস হাইলাইট করছে বারবার, প্যারিস অলিম্পিকে আরও একটু ভালো করার জন্য করনীয় নিয়ে আলোচনা করছে, করোনা মহামারীতে এ রকম সফল আয়োজনের জন্য বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
সাধারণ জাপানীজ জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অফিসের জুনিয়র কলিগদের টোকা দিলাম। জাপান ফুটবল টিম কোয়াটার ফাইনালে দুর্দান্ত ফ্রান্স কে ৪-০ গোলে হারানোর পরেরদিন অফিসে গেলাম এক বুক আশা নিয়ে খেলা নিয়ে মজা করে গল্প করব বলে, আশাহত হতে হলো সারাদিন অফিসে কাউকে দুর্দান্ত জয় নিয়ে টু শব্দটি না করতে দেখে। সেমিফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে খেলার আগের দিন লাজ লজ্জা ভেংগে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, কি ব্যাপার আজকে তোমাদের সেমিফাইনাল, জিততে পারবে ত? একজন ঠাট্টা করে বলল, আতিরিমাইদেস...(অবশ্যই), দুই একজন বাস্তবতার নিরিখে বলল, কঠিন তবে চেষ্টা করবে। সেমিফাইনালে ১-০ গোলে হারার পরের দিন, এ নিয়ে অবশ্য হতাশা কিংবা গালাগালি কোনটিই শুনলাম না।
মেয়েদের "পার্ক স্কেটবোর্ডিং" ইভেন্টটা আমার পরিবারের সবার পছন্দের ইভেন্ট ছিল। এই ইভেন্টে গোল্ড, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ যারা জিতে তাদের বয়স ছিল ১৯, ১২, ১৩। খেলাতে চরম প্রতিযোগিতা থাকলেও একজন যখন ভালো করছে তখন অন্যসব ফাইনালিস্ট
অভিনন্দন
জানিয়েছে আবার খারাপ করার সময়ও সবাই এসে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানিয়েছে। মুগ্ধ হয়ে দেখলাম, শিখলাম খেলায় প্রতিযোগিতা আর মনুষত্ব কাকে বলে, কিভাবে প্রকাশ করতে হয়।
জাপানের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ইস্যু করোনা ভাইরাস, তাই তো অলিম্পিকের মত এত বড় ইভেন্ট কে একপাশে ফেলে সরকার প্রয়োরিটি দিচ্ছে অর্থনীতির গতি ঠিক রেখে কিভাবে করোনা মোকাবেলা করা যায়।
প্রশ্ন: বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অলিম্পিক সফল আয়োজনের কৃতিত্ব কি জাপানের ক্ষমতাসীন দল কিংবা সরকার নিয়েছে?
- না, এ রকম দাবি কেউ করেনি। কৃতিত্ব দিয়েছে জাপান এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে। ধন্যবাদ জানিয়েছে জাপানের জনগনকে।
প্রশ্ন: উদ্বোধনী এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে জাপানের সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের কতজন বক্তব্য দিয়েছে?
- কেউ না, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও না। জাপানের পক্ষে উদ্বোধন করেছেন জাপানের সম্রাট।
তবে এই দুই অনুষ্ঠানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ফ্রন্ট লাইনার ডাক্তার নার্সদেরকে বিশেষভাবে সম্মানীত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: কোটি কোটি টাকার বাজেটের অলিম্পিক আয়োজনে কি পরিমান দুর্নীতি হয়েছে
- এ নিয়ে কোন আলোচনা শুনা যাচ্ছে না। ধরে নেয়া যায় দুর্নীতির পরিমাণ শুন্যের কাছাকাছি।
প্রশ্ন: জাপানীদের প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় হেরে যাওয়ার পর, জয়ী দল, খেলোয়াড় কে, কি পরিমান গালিগালাজ করা হচ্ছে?
- গালি কি না জানি তবে সবাই বলছে অসকারেসান অর্থাৎ যা করেছো অনেক ভালো করেছো।
প্রশ্ন: অপছন্দের দেশ, খেলোয়ারকে হারানোর পর জাপনীজদের প্রতিক্রিয়া কি ররম-
- চোখমুখ খিঁচে, ইওস কাত্তা, অর্থাৎ জিতে গেছি।
পাদটীকা: বাংলাদেশ টিমকে অস্ট্রেলিয়া কে T-20 তে হারানের জন্য
অভিনন্দন
তবে ফেসবুকের সাপোর্টারদের প্রতিক্রিয়া দেখে ভাবছি মানুষ হতে আমাদের আরও কতদুর যেতে হবে।
সমগ্র বাংলাদেশ যখন করোনার ভয়াল গ্রাসে জর্জরিত, প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে ভয়াবহ সময় পার করছে সে সময় পরীমনি নামক একজন কে নিয়ে যেভাবে রাষ্ট্রীয় ভাবে সুরসুরি দেয়া হচ্ছে তখন ভাবছি কত দুর্ভাগ্য আমাদের বাংগালী জাতির।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক : লিংকন, রিসার্চ ডিরেক্টর, মিতসুবিশি কেমিক্যাল অ্যাকুয়া সল্যুশন্স।
টোকিও আগস্ট ১০, ২০২১