নাদিম মাহমুদ :
কোভাক্সের আওয়তায় টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ৯২ টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ২ বিলিয়ন কোভিডের টিকা সরবরাহের জন্য প্রায় দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফান্ড গঠন করেছে কোভাক্স। সেই প্রেক্ষিত্রে বাংলাদেশসহ বিভিন্নদেশে পাঠানো টিকার মূল্য পরিশোধ করছে বৈশ্বিক এই COVAX Advance Market Commitment (AMC)।
নিয়ম অনুযায়ী ২ বিলিয়ন ডোজের প্রায় ১.৮ বিলিয়ন ডোজই আবার কয়েকটি দাতা দেশ যারা টিকা উ’ৎপাদন করছে তারাই সরবরাহ করেছে, যা তাদের কোভাক্সে দেয়া অর্থ সহায়তা মাইনাস করে বাকীটার মূল্য পরিশোধ করবে কোভাক্স। এই ধরেন জাপানের কথা, তারা তিনশো মিলিয়ন মার্কিন ডলার কোভাক্সে দিচ্ছে। এই অর্থের সমমূল্যের তাদের দেশের প্লান্টে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনিকার টিকা সরবরাহ করছে। কোভাক্সের নীতিমালা অনুযায়ী তারা বাংলাদেশেও ৩০ লাখ টিকা পাঠাচ্ছে।
চীন কোভাক্সে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিচ্ছে। আর এই অর্থের পরিবর্তে তারা তাদের দেশে উৎপাদিত সিনোফার্ম টিকা দিচ্ছে। এটা বাজারনীতির একটি কৌশলও বটে। টিকাতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধের পর তারা যা টিকা দিবে তার অর্থ কোভাক্সের কাছ থেকে আদায় করে নেবে। ফলে এই দেশটি যেমন দানশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে খ্যাতি পাচ্ছে, তেমনি বিশ্ব বাজারে টিকা বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে।
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে লক্ষ্য করলাম, আমাদের দেশের গণমাধ্যম কোভাক্সের পাওয়া টিকাকে সেই দেশের উপহারের টিকা হিসেবে লিখছে, যা মিসলিডিং তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট দেশের হাইলাইট করা হচ্ছে, যা কখনোই কাম্য নয়। এইসব নিউজে কোভাক্সের পরিবর্তে সেই দেশগুলোকে সাফাই গাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
দূতাবাসগুলো যে ভঙ্গিতে কথা বলছে, তাতে তারা বুঝাচ্ছে, তাদের দেশ সত্যিই উপহার দিয়েছে। ব্যাপারটা সত্যি বেমানান। কোভাক্সের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ নিদিষ্ট অঙ্কের ডোজই পাবে। তাহলে আমাদের গণমাধ্যম কেন টিকা পাঠানো সেই সব দেশের সাফাই গাইবে? কোভাক্সের টিকাকে কেন সংশ্লিষ্ট দেশের উপহার লিখবে? যে টিকার মূল্য পরিশোধ করছে, বিশ্বের দাতা দেশগুলো সেই টিকার ক্রেডিট কেন একটি দেশকে দিতে হবে? আমাদের গণমাধ্যমগুলো কী দূতাবাসগুলোর এই কৌশল বুঝতে পেরেছে?
লেখক : পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।