ডা. আরিফ মোরশেদ খান, (নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ) :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শচর্চা?
নাকি, লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা?
"মানুষকে ব্যবহার, ভালোবাসা ও প্রীতি দিয়েই জয় করা যায়; অত্যাচার, জুলুম ও ঘৃণা দিয়ে জয় করা যায় না!
দুঃখ আমার নাই। একদিন মরতেই হবে!
অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি মরতে পারি, সে মরাতেও শান্তি আছে!"
- অসমাপ্ত আত্মজীবনী ( পৃষ্ঠা: ২০০)
"হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর 'আব্বা' 'আব্বা' বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, "হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।" আমি আর রেণু দু'জনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, "আমি তো তোমারও আব্বা।" কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেকদিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়-স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ, তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।"
- অসমাপ্ত আত্মজীবনী ( পৃষ্ঠা: ২০৯)
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালো না বেসে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসার অভিনয় ??!!
লম্বা কালো ব্যানারে সাদা লেখা, শ্রদ্ধার প্রতীক বিশালাকার ফুলের তোড়া, কালো পোশাক বা কালো ব্যাজ, গরু-খাসীর বিরিয়ানির প্যাকেটে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বড় করে লেখা আয়োজকের নাম-ছবি, দেশ জুড়ে বা নগরী জুড়ে ব্যানার, পোস্টার, ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস - এসব খুবই সহজ কাজ!
বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন হৃদয়ে অনুভব করা আর ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করা , বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করা, anti-meritocracy সমাজের বিপরীতে শোষণহীন, মননশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক, জনকল্যাণকামী সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো বিনির্মাণে যার যার অবস্থান থেকে দেশপ্রেম ও সততার সাথে কাজ করে যাওয়া - বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রকৃত পদ্ধতিগুলোর চর্চা কিন্তু এতো সহজ নয়!
আজ বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের আর আদর্শের চর্চা থাকলে সত্য কথা বলতে ভয়ের সংস্কৃতি, গরিবের মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গার সংস্কৃতি, দুর্নীতি-অসততার সংস্কৃতি, জনগণের ঘাম আর রক্তের টাকা বিদেশে পাচারের সংস্কৃতি এভাবে জেঁকে বসতো না।
বঙ্গবন্ধু নিজে এসব করেননি, কিন্তু তাঁর ছবিযুক্ত কালো ব্যাজ বুকে এঁটেই আমরা এসব করছি!
বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও জীবনদর্শনের চর্চা হোক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার!