সময় জার্নাল প্রতিবেদক: দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। মঞ্চে সত্যের, সুন্দরের কথা বলে তারা। সমাজের অসঙ্গতি, অন্যায়, অসুন্দরের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদের মাধ্যম নাটক। তাদের শক্তি, হাতিয়ার, নাটক। সুন্দর এবং শান্তির পৃথিবী নির্মাণের জন্য মানুষকে আহবান করতে চায় নাটকের মাধ্যমেই। এসব লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন 'তিতুমীর নাট্যদল'। 'শিল্পনন্দনেপাল্টাই জীবন ও জগৎ' এই স্লোগানকে ধারণ করে ২০১৯ সালের ২৪ শে আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় তিতুমীর কলেজের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং একমাত্র নাটকের দল 'তিতুমীর নাট্যদল'। আজ সংগঠনটি দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নানাভাবে রাঙ্গিয়ে তুলছে। করোনাকালেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। মহামারীর মধ্যেও তারা অনলাইন রিহার্সেল এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহড়া কক্ষে রিহার্সেল করে প্রাণের বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঞ্চস্থ করে নাটক "১৯৭১" নাটকটি রচনা করেছেন হুমায়ুন আহমেদ এবং নির্দেশনায় ছিলো দিয়েছিলাম তিতুমীর নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর আহমেদ অভ্র। এছাড়া অনলাইনে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমেও নাটক প্রচার করে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের এই করোনাকালে বিনোদনের খোঁড়াক যোগাচ্ছেন।
ভবিষ্যতেও তারা তিতুমীর কলেজে মঞ্চস্থ করবে বিভিন্ন নাটক। ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে তারা জানান, আমাদের আগামী পরিকল্পনা হলো আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে তো নিয়মিত নাটক করি। আমাদের নিয়মিত নাটম প্রদর্শিত হবে। এছাড়া আমাদের ভিন্ন পরিকল্পনা হচ্ছে আমরা ২০২১ সাল থেকে সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ বরকত মিলনায়তনে একটা নাট্যোৎসব করতে চাই। এবং সেটি প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরাসরি কোন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও তারা অনলাইনেই উদযাপন করবে দিনটি। এ উপলক্ষে তিতুমীর নাট্যদলের ফেসবুক পেইজ থেকে রাত ৯টায় লাইভ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও একক অভিনয়, কলেজের শিক্ষক, সাবেক তিতুমীরিয়ান ভিন্ন থিয়েটারের সম্মানিত ব্যক্তিগনের শুভেচ্ছাবার্তা ফেসবুক পেজে প্রচার করা হবে। এছাড়াও তিতুমীর নাট্যদলে দুবছর পূর্তি উপলক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার কতৃপক্ষ একটি শ্রুতিনাটক "দ্যা ফেইথ" উপহার দিয়েছেন। সেটিও লাইভশোয়ে প্রচার করা হবে।
তিতুমীর নাট্যদলের সভাপতি অলিউল্লাহ তুহিন বলেন, সব অনুভূতি ব্যক্ত করা যায় না। তাও বলি তিতুমীর নাট্যদল আমার প্রতিষ্ঠিত স্বপ্ন, আমার সন্তান, আমার ভালোবাসার কুঠুরি। এখানে এলে, এ সংগঠনের সাথে জড়িত মানুষদের সাথে বসে কথা বললে নিজের সকল দুঃখ কষ্ট ভুলে যাই, এককথায় নতুন করে বাঁচতে শিখি। প্রতিষ্ঠালগ্নের কথা যদি বলি আমি তখন অনার্স প্রথম বর্ষে পরি। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পরই অনেক সংগঠনের উপস্থিতি পেলেও থিয়েটার ছিলো না। আমি আগে থেকেই থিয়েটার করতাম সে খিদে থেকেই থিয়েটার সংগঠন করার জন্য বেকুল হয়ে পরলাম। প্রথম দিকে তেমন কিছুই বুজতাম না এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছি, বিভিন্নজন আশা দেখিয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে আনঅফিসিয়াল দল করে ফেলি।
হুটকরেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালমা বেগম ম্যামের খবর পেয়ে যাই। তখন তিনি সে সময়ের শিক্ষক পরিষদের কালচারাল দ্বায়িত্বে ছিলেন। তার কাছে ছুটে যাই। নিজের ইচ্ছের কথা সব খুলে বলি। ম্যাম হয়তো আমাকে বুঝতে পেরেছে তিনি আমাকে আশ্বাস দিলেন যে আমাকে থিয়েটার করার অনুমতি এনে দিবে। কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে বললেন আর বললেন নিশ্চিন্তে থাকো। ভরসা পেলাম কিন্তু নিশ্চিন্তে থাকতে পারলাম না প্রতিনিয়ত ম্যামকে ফোন করেই যেতাম। পরে ম্যাম একদিন বললেন আমাদের কলেজেই একজন ম্যাম আছেন যিনি থিয়েটার করেন এবং অনেক বড় অভিনেতা। জুয়েনা শবনম ম্যামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আমাকে তারপর শবনম ম্যামকেও আমি সমানে ফোন করে যেতাম কবে আমার থিয়েটার সংগঠন হবে। সবমিলিয়ে আঠারো মাসের পরে ২৪ শে আগস্ট সালমা ম্যাম ও জুয়েনা শবনম ম্যামের নেতৃত্বে আমাদের অধ্যক্ষমহদ্বয় ও উপাধ্যক্ষ অনুমতি দেন।
তখন উপাধ্যক্ষ ছিলেন ড. আবেদা ম্যাম। আমাকে ভিষণ ভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন, উপদেশ দিয়েছেন। কোন পথে আগাতে হবে বলেছেন। সালমা ম্যাম শবনম ম্যাম ছাড়াও তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ও জুয়েল মোড়লের অবদান ছিলো অনেক।। সেই হাঁটিহাটি পা পা করেই আমার সংগঠনের আজ দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। আমার সংগঠন তিতুমীর নাট্যদল যুগযুগ ধরেই বয়ে চলবে এ আমার প্রত্যাশা। জয় হোক মানবতার, জয় হোক থিয়েটারের।। শুভ জন্মদিন তিতুমীর নাট্যদল।
তিতুমীর নাট্যদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর আহমেদ অভ্র বলেন, আজ আমার প্রিয় সংগঠন, আমার আশ্রম তিতুমীর নাট্যদলের ২য় বর্ষপূর্তি। আজ আমার এবং আমার দলের প্রতিটি সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দর্শকদের জন্য একটা বিশেষ দিন, আনন্দের দিন। একটু মন খারাপ লাগছে করোনা মহামারীর জন্য আমরা একসাথে হয়ে এই আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারছিনা।
তবে আনন্দ লাগছে আমরা সকল সীমাবদ্ধতাকে জয়ী করে এগিয়ে যাচ্ছি। এই মহামারীর মধ্যেও আমরা অনলাইন রিহার্সেল এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহড়া কক্ষে রিহার্সেল করে প্রাণের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা মঞ্চস্থ করি নাটক "১৯৭১" নাটকটি রচনা করেছেন হুমায়ুন আহমেদ এবং নির্দেশনা দিয়েছিলাম আমি।
আমরা বিশ্বাস করি সামনেও সকল প্রতিকূলতা জয়ী করে আমরা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে নাটক করবো। মঞ্চে আমরা সত্যের কথা বলবো, সুন্দরের কথা বলবো। আমরা নাটক করবো সমাজের অসঙ্গতি, অন্যায়, অসুন্দরের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রতিবাদের মাধ্যম, নাটক। আমাদের হাতিয়ার, নাটক। আমাদের শক্তি, নাটক। আমরা নাটকের মাধ্যমে সামুষের মধ্যে ইতিবাচকতা ছড়াতে চাই। আমরা সুন্দর এবং শান্তির পৃথিবী নির্মাণের জন্য মানুষকে আহবান করতে চাই নাটকের মাধ্যমে। তিতুমীর নাট্যদলের বর্ষপূর্তিতে সকল সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দর্শকদের জানাই শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিতুমীর নাট্যদলকে কলেজের শিক্ষক, বিভিন্ন সংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা শুভেচ্ছা জানইয়েছে।
সময় জার্নাল/এমআই