অধ্যাপক নাজনীন সুলতানা :
এক সময় ২৬শে আগষ্ট মানেই ছিল সকাল আট'টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরে লক্ষীপুর মোড়ে চলে যাওয়া।
তুই আর আমি একসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল আর রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা শেষ করেছি। তুই তখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ আর আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
২৬ আগস্ট যত কাজই থাকনা কেন সেদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর তুই তোর মেডিকেলের ক্লাশ থেকে অলিখিত ছুটি নিয়ে নিতাম।
সকালের লক্ষীপুর মোড়।
মেডিকেল কলেজের পাশের যে কোনো এক দোকানে ঢুকে পরোটা, ডিম ভাজা আর রসগোল্লা দিয়ে আমরা সকালের নাস্তা করতাম।
তারপর হাটতে হাটতে সি, এন্ড,বি'র মোড় দিয়ে চলে যেতাম পদ্মার ধারে। সেই এলোমেলো হাটার ফাঁকে বা নদীর তীরে বসে অজস্র কথা বলতাম আমরা। এসব কথোপকথনের কোন নির্দিষ্ট বিষয় ছিলনা। ফেলে আসা স্কুল বা কলেজ জীবন নিয়ে গল্প করতাম।
বন্ধুদের নিয়ে গল্প করতাম।
পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে গল্প করতাম।
এরমাঝে নতুন কোন কোন বই পড়েছি, কোন কবিতার কোন লাইনগুলো ভালো লেগেছে, কোন গান মন ছুঁয়ে গিয়েছে এসবের পাশাপাশি আমাদের কার কোথায় লেখা ছাপা হয়েছে সহ আরো কত কিছু নিয়ে অবিরাম বকবক চলতো আমাদের।
সেসময় রাজশাহী শহরে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট "নানকিং" মাত্র অল্প কিছুদিন হলো চালু হয়েছে। সেসব চাইনিজ খাবারের অধিকাংশ আইটেমের নামই তখন আমাদের অচেনা ছিলো।
দুপুরবেলা নানকিংয়ে আমাদের হাত খরচ থেকে জমা করা টাকা দিয়ে সাধ্যমত অল্প কিছু খেয়ে বাড়ী ফিরতাম।
এখন তুই কানাডায়।
আমি বাংলাদেশের রাজশাহীতে।
এখনো সুখ- দুখের কথা আপন জন, বন্ধু, সহকর্মী - অনেকের সাথে শেয়ার করি। পরিণত বয়েসের জন্য হয়ত অনেক কিছু মেনে নিতেও শিখেছি।
কিন্ত তুই আমার পাশে ছিলি তখন যখন তুই নিজেও ছিলি আমার মতই সদ্য কৈশোর ফেলে আসা একজন।
তখন, সেই টিন এজ বয়সে কিভাবে তুই আমাকে সব দুঃখ - কষ্ট সবকিছু থেকে আগলিয়ে রেখেছিলি তা এখন বুঝি আর অবাক হই।
শুভ জন্মদিন, ডাঃ রুখশানা শাহীন পান্না।
অনেক দূরে আছিস, তাতে কি?
এই লেখা হয়তো পড়বিনা, তাতে কি?
আমিতো জানি - তোর জন্য আমার যে নিরন্তর ভালোবাসা আর
শুভ কামনা
- তা তুই ঠিক অনুভব করতে পারছিস।।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী কলেজ।